বিক্ষোভের নামে অশান্তি বরদাস্ত করা হবে না, বার্তা বিরক্ত মমতার

শুক্রবারের পরে শনিবারও জাতীয় সড়ক অবরোধ, একাধিক বাস পোড়ানো, রেলস্টেশনে ভাঙচুর হয়। বিক্ষোভের নামে অশান্তি ছড়ালে তা বরদাস্ত করা হবে না বলে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী।

কোনা এক্সপ্রেসওয়ের উপরে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েচে বাস। শনিবার সকালে।

বিক্ষোভের নামে বাস পোড়ানো ও সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করলে আইন অনুযায়ী শাস্তি পেতে হবে। শুক্রবার আবেদন জানালেও শনিবার বিক্ষোভের নামে অরাজকতা বাড়তে থাকলে কড়া বার্তা দিলেন বিরক্ত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

শুক্রবার সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে রাজ্যের একাধিক জায়গায় বিক্ষোভ দেখা দেওয়ার পরে শান্তিপূর্ণ ভাবে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বান জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু শনিবার সকাল থেকে ফের জাতীয় সড়ক অবরোধ, কোনা এক্সপ্রেসে একাধিক বাসে ভাঙচুর ও পোড়ানোর জেরে ফের অশান্তি ছড়ায়। হিংসাত্মক ঘটনার খবর পাওয়া যায় মুর্শিদাবাদ, উত্তর ২৪ পরগনা এবং হাওড়ার গ্রামীণ অঞ্চল থেকে।

এ দিন সকালে হাওড়ার ডোমজুরের কাছে ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক ফের অবরোধ করে টায়ার পোড়ান বিক্ষোভকারীরা। বেশ কিছু গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। পরিস্থিতি সামলাতে ঘটনাস্থলে পৌঁছলে পুলিশবাহিনীর উপরেও চড়াও হয়ে পাথর ছুড়তে শুরু করে বিক্ষুব্ধরা। শুক্রবার রাতে হাওড়ার বাগনানে বেশ কয়েকটি দোকানে লুঠপাট চালানোর খবরও পাওয়া গিয়েছে।

বাগনানে জাতীয় সড়কের উপর অবরোধ তুলতে গেলে বিক্ষোভকারীদের পাথরবৃষ্টির নিশানায় পড়ে পুলিশ।

এ দিন হাওড়ার সাঁকরাইল স্টেশনে অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষোভকারীরা। মুর্শিদাবাদের কৃষ্ণপুরে দাঁড়িয়ে থাকা বেশ কয়েকটি ট্রেনে আগুন লাগানো হয়। এ ছাড়া মালদার হরিশচন্দ্রপুরেও ট্রেনে ভাঙচুর ও রেললাইনে অবরোধ করে বিক্ষোভকারীরা। নদিয়ার তেহট্টে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখায় নাগরিকত্ব আইন বিরোধীরা। মালদার সুজাপুর ও কালিয়াচক সংলগ্ন ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে অবোধেহর জেরে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার সরিষায় ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়কেও চলে অবরোধ।

এই পরিস্থিতিতে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে কড়া বার্তা দিয়ে মমতা বলেন, ‘গণতান্ত্রিক পথে আন্দোলন করুন। কিন্তু আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। পথ অবরোধ, রেল অবরোধ করবেন না। সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বরদাস্ত করা হবে না। যাঁরা গন্ডগোল করছেন, রাস্তায় নেমে আইন হাতে তুলে নিচ্ছেন, তাঁদের কাউকে ছেড়ে দেওয়া হবে না। বাসে আগুন লাগিয়ে, ট্রেনে পাথর ছুড়ে, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করলে, আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

আরও একবার তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকার নির্দেশ দিলেও পশ্চিমবঙ্গে নাগরিকত্ব আইন প্রয়োগ করবে না রাজ্য প্রশাসন। বিক্ষোভকারীদের এই বিষয়ে আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকার আইন পাশ করলেও রাজ্যকেই তা কার্যকর করতে হয়। আমরা এখানে এনআরসি বা ক্যাব করতে দেব না তা বলেই দিয়েছি। তাই নিশ্চিন্তে থাকুন। রাস্তা ব্লক করবেন না দয়া করে। আইন হাতে তুলে নেবেন না। এতে মানুষের অসুবিধা হয়। মানুষ ভাল থাকুন এটাই আমাদের ইচ্ছা। আসুন সবাই মিলেমিশে থাকি।’

মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা টুইট করে শান্তি-শৃঙ্খলা মেনে চলার আবেদন জানিয়েছে রাজ্য পুলিশও।