'সত্য সেলুকাস..., কী বিচিত্র এই...!'
খড়দার একটি ঘটনা সম্পর্কে অবহিত হলে যেকোনও সুস্থ, স্বাভাবিক এবং প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের মনে একথা জাগতেই পারে।
ঘটনা হল - এই এলাকারই বন্দিপুর দোপেড়ের বাসিন্দা এক যুবক, যিনি কিনা এলাকায় ফুটবল খেলোয়াড় হিসাবেও বেশ জনপ্রিয়, সেই যুবককে বেধড়ক মারধর করার অভিযোগ উঠেছে এলাকারই এক তৃণমূল কংগ্রেস নেতার ছেলে আসফাক পুরোকাইত ওরফে অন্তুর বিরুদ্ধে।
কিন্তু, মারধরের কারণ কী জানেন? বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এই সংক্রান্ত যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, সেই অনুসারে - এই একই এলাকার বাসিন্দা এক তরুণীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ফুটবল খেলোয়াড়ের প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে গত তিনবছর ধরে। সম্প্রতি তাঁরা স্থির করেন, এবার তাঁরা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হবেন এবং তা নিয়ে দুই পরিবারেরও কোনও আপত্তি নেই। বস্তুত, ইদের দু'দিন পরই তাঁদের বিয়ের তারিখ ধার্য করা হয়।
কিন্তু, আপত্তি রয়েছে ওই তৃণমূল নেতার ছেলের। তাই হবু স্ত্রীকে নিয়ে বিয়ের কেনাকাটা সেরে, তাঁকে তাঁর বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে যখন ওই যুবক নিজের বাড়ি ফিরছিলেন, তখনই তাঁর পথ আটকানো হয় বলে অভিযোগ।
যুবকের কাছে আসফাক এবং তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গোরা জানতে চান, তিনি কেন 'তাঁদের এলাকায়' ঢুকেছেন? এমনকী, ওই যুবককে বলা হয়, তিনি বিয়ে না করেই ওই তরুণীর সঙ্গে মেলামেশা করছেন, যা নাকি সহ্য করা হবে না! এরপরই প্রায় ৩০-৪০ জন মিলে ওই যুবককে মারধর করেন বলে দাবি করা হচ্ছে। ঘটনায় ইতিমধ্যেই যুবকের পরিবারের তরফ থেকে স্থানীয় থানায় 'মুরুব্বি' আসফাকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হলেও তিনি আপাতত গা-ঢাকা দিয়েছেন বলেই শোনা যাচ্ছে।
এবার জানা যাক, এই বিষয়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতা শুকুর আলির কী বক্তব্য? তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, এই ধরনের সম্পর্কে তাঁর আপত্তি আছে! যদিও সেই আপত্তি করার অধিকার তিনি কোথা থেকে জোগাড় করলেন, তা জানা নেই।
শুকুর সাহেবের আপত্তির কারণ তথা দাবিগুলি হল - যথাক্রমে - ওই তরুণী ওই যুবকের থেকে বয়সে বড়, ওই তরুণী আগেও একাধিকবার বিয়ে করেছেন এবং ওই তরুণী তিন সন্তানের মা! কিন্তু, এই তথ্যাবলী তো তরুণীর প্রেমিকও জানেন। সেটা জেনেও যদি তিনি এবং তাঁরা দু'জনে একসঙ্গে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেন, তাহলে শুকুর সাহেব বা আসফাকরা এই বিষয়ে নাক গলান কোন অধিকারে?
এর প্রেক্ষিতে তৃণমূল ব্লক সভাপতি শুকুর আলির বক্তব্য হল - 'এটা ইউরোপ নাকি? প্রেমিকা ওঁর থেকে অনেক বড়,তিন ছেলেমেয়ের মা! এখানে ইউরোপ হতে দেবেন না এলাকার বাসিন্দারা।' কিন্তু ঘটনা হল, ভারতবর্ষের আইন অনুসারে কোনও প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের ব্যক্তিগত পরিসরে নাক গলানোটা তো অপরাধ!
লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, সংবাদমাধ্যমেরই সংশ্লিষ্ট একটি প্রতিবেদনে এই ঘটনায় স্থানীয় বিজেপি নেতা জয় সাহার মন্তব্য প্রকাশ করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, 'কে কী খাবে, কে কী করবে, সেটা ওরাই (তৃণমূল কংগ্রেস) ঠিক করছে। রাজ্যে তো মানুষের মৌলিক অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। সেখানে ওদের নেতারা এই ধরনের আচরণ করবেন, সেটাই স্বাভাবিক। এখানে বাড়ি করলে পয়সা দিতে হয়, বিয়ে করলেও পয়সা দিতে হয়।'
অর্থাৎ, জয়বাবু এখানে ব্যক্তি স্বাধীনতার কথা বলছেন। যেটা অবশ্যই প্রশংসনীয়। কিন্তু, তাঁর দলের নেতাদেরই মাঝেমধ্যেই মানুষের খাদ্যাভ্য়াস, আচরণ নিয়ে খবরদারি করতে দেখা যায়!
আবার উলটো দিকে, শুকুর আলি যে দলের নেতা, সেই দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব সর্বদাই ব্যক্তিগত স্বাধীনতার পক্ষে জোরালো সওয়াল করে। এটাও খুব ভালো কথা। কিন্তু, এই দলেরই এক নেতা দিন কয়েক আগে নবদ্বীপের মানুষকে দোল উৎসবে আমিষ না খাওয়ার 'অনুরোধ' করেছিলেন!
'সত্য সেলুকাস..., কী বিচিত্র এই ....!'