বন দফতরে চাকরির টোপ দিয়ে লক্ষাধিক টাকা প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার করা হল এক ভুয়ো সাংবাদিক ও তার সঙ্গীকে। পুরুলিয়ার সদর থানা পুলিশ দু’জন অভিযুক্তকে বাড়ি থেকেই গ্রেফতার করেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃত ওই ভুয়ো সাংবাদিকের নাম অমিত সেন। অভিযুক্তের বাড়ি পুরুলিয়া ৭ নম্বর ওয়ার্ডের উদ্ধবচন্দ্র সিনহা স্ট্রিটে। তার সঙ্গী অপর অভিযুক্তের নাম রাজা চক্রবর্তী। তার বাড়ি পুরুলিয়ার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের নিমটাড় এলাকায়। মূল অভিযুক্ত অমিত আদতে পেশায় ভাড়ার গাড়ির চালক।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত ওই যুবক ভুয়ো সাংবাদিক সেজে মাঝেমধ্যেই অযোধ্যা পাহাড়ে যেত। নিজেকে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে খবর করার অভিনয় করত। এমনকী প্রভাব খাটাতে একাধিক নেতা মন্ত্রীদের সঙ্গে তার তোলা ছবি দেখিয়ে বিশ্বাস অর্জনের চেষ্টা করত বলে অভিযোগ। আরও অভিযোগ উঠেছে, শাসক দলের বিভিন্ন নেতা-মন্ত্রীদের রাজনৈতিক কর্মসূচি ছাড়াও প্রশাসনিক অনুষ্ঠানে দেখা যেত এই অভিযুক্তকে। শুধু তাই নয়, বন দফতরের ভুয়ো ইমেল আইডি তৈরি করে জাল নিয়োগপত্র পাঠিয়ে এক ব্যক্তির কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা প্রতারণার অভিযোগে অবশেষে পুলিশের জালে ধরা পড়ে যায় এই অভিযুক্ত।
জানা গিয়েছে, ২০২০ সালে অযোধ্যা হিলটপের বাসিন্দা অপূর্ব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলাপ হয় অমিতের। প্রতারিত ওই ব্যক্তির অভিযোগ, তাঁকে বনদফতরে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার টোপ দিয়ে বেশ কয়েক ধাপে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা প্রতারণা করে অভিযুক্ত। অভিযোগ উঠেছে, এরপর অমিত বন দফতরের একটি ভুয়ো ইমেল আইডি তৈরি করে wbforestsec.gov.in@gmail.com। এই ইমেল আইডির সাহায্যে অপূর্বকে জাল নিয়োগপত্রও পাঠায়। এরপর অমিত তাঁকে নিমটাড়ের বাসিন্দা রাজা চক্রবর্তীর সঙ্গে দেখা করতে বলে।
প্রতারিতের অভিযোগ, এরপর তিনি রাজা চক্রবর্তীর সঙ্গে দেখা করলে, তাঁকে বলা হয় পশ্চিম মেদিনীপুরের পিড়াকাটা রেঞ্জের বন দফতরের কাজে যোগ দিতে হবে। নিয়োগপত্র নিয়ে যোগ দিতে গেলে প্রতারিত যুবককে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। ঘটনার পরও চাকরির আশায় বন বিভাগের ওই রেঞ্জ অফিসের পাশের হোটেলে প্রায় এক মাস ধরে ছিলেন প্রতারিত ওই যুবক। অবশেষে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে প্রতারিত হয়েছেন বুঝতে পেরে পুরুলিয়ার বাড়িতে ফিরে আসেন অপূর্ব। এরপর অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন তিনঅন্য দিকে, মেদিনীপুরের বন বিভাগের ওই রেঞ্জ অফিস জাল নিয়োগপত্র নিয়ে পদক্ষেপ নেয়। বন দফতরের মুখ্য বনপাল ও পার্সোনাল ম্যানেজমেন্ট সেল এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিষয়টি নিয়ে পুরুলিয়ার ডিভিশনের কাছ থেকে নিয়োগের বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়ে পাঠায়। তদন্তে উঠে আসে ওই নিয়োগপত্রটিই জাল ছিল। এই ধরনের কোনও নিয়োগ হয়নি বলে জানতে পারেন মুখ্য বনপাল।
চলতি বছরের ৫ মে মুখ্য বনপাল পুলিশ সুপারকে লিখিত আকারে বিষয়টি জানান। ওই চিঠির ভিত্তিতে জেলা পুলিশ ডিস্ট্রিক্ট এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চের ডিএসপিকে ঘটনা তদন্ত করে রিপোর্ট পেশ করতে নির্দেশ দেন। ৩০ জুলাই এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চের তরফ থেকে তদন্তের রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়। ওই রিপোর্টের ভিত্তিতেই পুরুলিয়ার সদর থানার পুলিশ তদন্তে নেমে অভিযুক্ত অমিত সেন, রাজা চক্রবর্তী ছাড়াও প্রতারিত অপূর্ব মুখোপাধ্যায়ের নামেও প্রতারণা ও জালিয়াতির একাধিক ধারায় অভিযোগ দায়ের করে।