ডাকাতির ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা এক ব্যক্তির মৃত্যুকে ঘিরে তোলপাড় উত্তরবঙ্গ। জানা গিয়েছে, বুধবার বছর তিরিশের অনুপ রায়কে আটক করে নিয়ে আসা হয় স্থানীয় ইটাহার থানায়। সেখানে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। তড়িঘড়ি তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।
ইতিমধ্যে এ ঘটনাকে ঘিরে শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক টানাপোড়েন। বিজেপি–র অভিযোগ, তাদের কর্মী অনুপকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে পুলিশ। আর এর নেপথ্যে রয়েছে তৃণমূল। যদিও পুলিশ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। স্থানীয় তৃণমূল নেত্বত্ব পাল্টা অভিযোগ করে জানান, যে কোনও ঘটনায় তৃণমূলকে দায়ী করাটা অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে বিজেপি–র।
যদিও মৃত ব্যক্তির মা এই মর্মন্তিক ঘটনার জন্য তৃণমূলের বিরুদ্ধেই অভিযোগ এনেছেন। একইসঙ্গে তিনি ফের মৃতদেহের ময়নাতদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
উত্তর দিনাজপুর জেলার পুলিশ সুপার সুমিত কুমার জনিয়েছেন, অনুপ রায় নামে ওই ব্যক্তিকে ডাকাতির ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়। হঠাৎ তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের জেরেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের পক্ষ থেকে টুইট করে জানানো হয়েছে, মৃতদেহের ময়নাতদন্তের ভিডিও রেকর্ড করা রয়েছে। সব অভিযোগ ভিত্তিহীন। ভুয়ো তথ্য বা কোনও গুজবে কান না দিতে আবেদনও জানানো হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, নানারকম অপরাধমূলক কাজকর্মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন মাদকাসক্ত অনুপ রায়। ২৮ অগস্ট রায়গঞ্জে এক ব্যবসায়ীর মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে লুঠপাট করা হয়। এ ঘটনায় ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের জেরা করে জানা যায়, এই ঘটনার মূল পান্ডা অনুপ। তাই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়।
এদিকে, মৃতের মা দুলালি বর্মন রায় বলেন, ‘মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে আমার ছেলেকে খুন করা হয়েছে। গ্রামবাসীরাই আমাকে জানান, কয়েকজন এসে ওকে তুলে নিয়ে গিয়েছে। কিন্তু তারা পুলিশ ছিল কিনা তা জানি না।’ এর পরই তিনি তাঁর ছেলের দেহ ফের ময়নাতদন্তের দাবি জানান। এ ব্যাপারে তিনি পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত আবেদনও করেছেন।
রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের অভিযোগ, ‘পুরো ঘটনাটাই বেআইনি। প্রথমত, থানায় নিয়ে যাওয়ার পরই মারা যান অনুপ। দ্বিতীয়ত, তাঁর দেহ শনাক্ত করতে ডাকা হয় এক দূর–সম্পর্কের আত্মীয়কে। তৃতীয়ত, গভীর রাতে তাড়াহুড়োর মধ্যে তাঁর দেহের ময়নাতদন্ত করা হয়।’
উত্তর দিনাজপুরের তৃণমূল জেলা সভাপতি কানাইয়ালাল আগারওয়াল জানান, যখনই কোনও ঘটনা ঘটে তখন বিজেপি তৃণমূলকেই দোষারোপ করে। সব জায়গায় এখন তৃণমূলের ভুত দেখতে পায় বিজেপি। এই ঘটনার সঙ্গে তৃণমূলের কোনও যোগ নেই বলেই দাবি করেন তৃণমূল জেলা সভাপতি।
এদিকে, আজ, শুক্রবার ইটাহার থানা ঘেরাওয়ের ডাক দিয়েছে বিজেপি।