কয়েকদিন ধরেই দাদনের বকেয়া টাকা ফেরত চেয়েও পাননি তিনি। সেজন্য করোনা সংক্রমিত স্ত্রী'কে দেনাগ্রস্তের বাড়ির সামনেই সটান বসিয়ে দিলেন পাওনাদার! বুধবার ঘটনাটি ঘটেছে বৈদ্যবাটির নিমাইতীর্থঘাট এলাকায়। ঘটনার জেরে হুলুস্থুলু কাণ্ড বেঁধে গেল হুগলির বৈদ্যবাটিতে।
জানা গিয়েছে, বৈদ্যবাটির মাটিপাড়ার বাসিন্দা ওই পাওনাদারের নাম গঙ্গারাম সরকার। তিনি পেশায় ইটের ব্যবসায়ী। ওদিকে ওই এলাকারই নিমাইতীর্থ ঘাট এলাকায় থাকেন ইট ভাটার মালিক শেষনাথ সিং।
গত দু’মাস আগে ইটের ব্যবসা করার জন্য শেষনাথকে দাদন হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা দেন গঙ্গারাম। কিন্তু সম্প্রতি গঙ্গারামের স্ত্রী'র করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। তাঁর চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতে পারছিলেন না তিনি। সেজন্যে শেষনাথেক কাছে দাদনের বকেয়া টাকা ফেরত চান গঙ্গারাম। কিন্তু অভিযোগ ওঠে, বারবার তাগাদা দেওযার সত্ত্বেও সেই টাকা তাঁকে ফেরত দিচ্ছিলেন না শেষনাথ।
সেই কারণে এদিন স্ত্রীকে টোটোতে চাপিয়ে সটান শেষনাথের বাড়ি পৌঁছন গঙ্গারাম। তাঁর বাড়ির সামনেই স্ত্রীকে বসিয়ে দেন তিনি। তারপর দেড় ঘণ্টা বসে থাকার পর সেখান থেকে টাকা নিয়েই ফেরেন পাওনাদার ওই ব্যক্তি।
গঙ্গারামের দাবি, বেশ কয়েকবার টাকার জন্য তাগাদা দিয়েছিলেন তিনি। তবে টাকা ফেরত দিচ্ছিলেন না শেষনাথ। করোনা আক্রান্ত স্ত্রী'র চিকিৎসার জন্যই এই কাণ্ড ঘটাতে বাধ্য হয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি। তিনি আরও জানান, প্রথমে স্ত্রী'র করোনা পজিটিভ রিপোর্ট শেষনাথকে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে টাকা চেয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও কোনও লাভ হয়নি। সেজন্য করোনা আক্রান্ত স্ত্রী'কে নিয়ে ইটভাটা মালিকের বাড়িতে চলে আসেন।
এই ঘটনা জানাজানি হতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে শেষনাথের পরিবার ও প্রতিবেশীদের মধ্যে। কিন্তু স্ত্রী'র সঙ্গে প্রায় দেড় ঘন্টা সেই বাড়িতে ঠায় বসে থাকেন গঙ্গারাম। অবশেষে ১০ হাজার টাকা দিয়ে দেন শেষনাথ। তার পরেই স্ত্রীকে নিয়ে ঘর ছাড়েন তিনি।
অন্য দিকে শেষনাথ বলেন, ‘ আমার ইটভাটা এখন বন্ধ রয়েছে। দাদনের টাকা ফিরিয়ে দিতাম। তার সত্ত্বেও এই কাণ্ড ঘটাল গঙ্গারাম!’ তিনি আরও বলেন, ‘ইটভাটা লাগোয়া বাড়িতে ছোটো বাচ্চা নিয়ে বাইশজন সদস্য থাকি। তাঁদের যদি করোনা হয়, তার দায় কে নেবে? তাঁর অভিযোগ, করোনা আক্রান্তকে তাঁর বাড়িতে নিয়ে আসার পর প্রশাসনের কাছে সাহায্য চেয়েও পাননি তিনি।
এই ঘটনায় গঙ্গারামের বিরুদ্ধে শ্রীরামপুর মহকুমা শাসক ও পুলিশে অভিযোগ করবেন বলেও জানান তিনি। এদিকে ওই দম্পতি চলে যাওয়ার পর আতঙ্কিত পরিবারের সদস্যরা সাবান জল ঢেলে পুরো বাড়ি ধুয়ে ফেলেন।