ইউনেস্কো স্বীকৃত ভারতের একমাত্র ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বভারতী। একসময় যেখানে পড়াশোনা ছিল সম্মানের বিষয়, সেখানে এখন ভর্তির আগ্রহ ক্রমশ নিম্নমুখী। চলতি শিক্ষাবর্ষে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তর মিলিয়ে ২০০-রও বেশি আসন ফাঁকা, যা শিক্ষক, প্রাক্তনী ও শিক্ষাবিদদের মধ্যে গভীর চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আরও পড়ুন: অনুমতি ছাড়াই সরকারি জমিতে তোরণ নির্মাণ, সংঘাতে জড়াল বিশ্বভারতী-পূর্ত দফতর
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নির্ধারিত প্রায় ২,৩০০ আসনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ এখনও খালি। বিশেষ করে ভাষা, সংস্কৃতি ও মানবিকবিদ্যার বিভাগগুলোতে পড়ুয়া মিলছে না। স্নাতক স্তরে ফাঁকা আসনের মধ্যে হিন্দি বিভাগে ২০টি, সংস্কৃত বিভাগে ২৮টি, ওড়িয়া বিভাগে ১৫টি, তুলনামূলক ধর্ম বিভাগে ৪৫টি, অর্থনীতি বিভাগে ১৫টি এবং দর্শন বিভাগে ৩১টি।
অন্যদিকে, স্নাতকোত্তর স্তরে ফাঁকা আসন রয়েছে ৫ বছরের সমন্বিত বিজ্ঞান বিভাগে ১২টি, যোগ বিভাগে ২৫টি এবং এম.এড- এ ২৭টি। এছাড়াও, সঙ্গীত ভবন ও পূর্ব এশিয়া (চিনা-জাপানি ভাষা) বিভাগেও একাধিক আসন খালি।
বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক অতিগ ঘোষ জানান, বিভিন্ন কারণে ভর্তির আসন শূন্য রয়েছে। বিকল্প শিক্ষার প্রবণতায় অনেকেই মূলধারার বাইরে যাচ্ছেন। ভর্তি প্রক্রিয়া আরও জোরদার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে শিক্ষাবিদ ও প্রাক্তনীদের একাংশ স্পষ্টই বলছেন, এনআইআরএফ র্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বভারতীর পতন, পরিকাঠামো ও শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন, কর্পোরেট স্টাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার কারণে ভর্তি কমেছে।
উল্লেখ্য, এই সেই প্রতিষ্ঠান যেখানে পড়েছেন ও পড়িয়েছেন অমর্ত্য সেন, সত্যজিৎ রায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, মহাশ্বেতা দেবী, নন্দলাল বসু, রামকিঙ্কর বেইজ সহ বহু মেধাবী মনীষী। সেই বিশ্বভারতীতেই আজ ভর্তি কমছে। কেন্দ্রীয় সরকার ২০১৪-২০২৫ সময়কালে সংস্কৃতের প্রসারের জন্য ২,৫০০ কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ করেছিল। অথচ বিশ্বভারতীর সংস্কৃত বিভাগেই ফাঁকা বহু আসন! প্রবীণ আশ্রমিক অপর্ণা দাস মহাপাত্র মন্তব্য করেন, বিশ্বভারতী শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয়, রবীন্দ্রভাবনার প্রতীক। সেখানে অনাগ্রহ দেখা যাচ্ছে মানে দেশের সাংস্কৃতিক চেতনায় ছিদ্র।