নজির সৃষ্টি করলেন তিনি। রক্তক্ষয়ী আন্দোলন ছেড়ে তিনি এসেছেন সমাজের মূল স্রোতে। আর সমাজের মূলস্রোতে এসেও বুঝিয়ে দিলেন তিনি মেধাবী। হ্যাঁ, তিনিই যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বন্দি মাওবাদী নেতা অর্ণব দাম ওরফে বিক্রম। এবার বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে পিএইচডি করার যোগ্যতা নির্ণায়ক পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন একদা এই মাওবাদী নেতা। অ্যাকাডেমিক স্কোর ও ইন্টারভিউয়ের প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছেন অর্ণব। তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ৭৬.৮৬৭০। আগে মাওবাদী থাকলেও মেধায় অর্ণব টেক্কা দিতে পারে অনেককেই। এবার অর্ণব পিএইচডি করবেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। পিএইচডি করার ইন্টারভিউ দিয়েছিলেন তিনি। মেধাতালিকায় প্রথম নামই তাঁর। অর্ণবের এই সাফল্যই ইতিহাস গড়ল।
এদিকে নিজেও বেশ খুশি অর্ণব। তাঁকে আর কেউ মাওবাদী বলার আগে অন্তত পাঁচবার ভাববে। কারণ ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করা মোটেই অন্যায়ের নয়। এই সাফল্যের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সৈয়দ তনভির নাসরিন বলেন, ‘খুবই মেধাবী ছাত্র অর্ণব। আমাদের বিভাগে গবেষণা করার সুযোগ পাচ্ছেন। পিইচডিতে ভর্তির ১০০ নম্বরের মধ্যে ৭০ শতাংশ অ্যাকাডেমিক স্কোর থেকে হয়। আর ইন্টারভিউতে থাকে ৩০ নম্বর। সব মিলিয়ে অর্ণব সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছেন। এটা একটা খুবই ভাল দিক। উনি এখানে পিএইচডি করলে সেটা ইতিহাস হয়ে থেকে যাবে।’
আরও পড়ুন: মমতাকে বাড়তি আক্রমণ, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারকে ভিক্ষা বলা ভুল হয়েছে, কেন্দ্রীয় কমিটির ধমক সেলিমদের
অন্যদিকে বামফ্রন্ট সরকারের আমলে ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পশ্চিম মেদিনীপুরের শিলদায় ইএফআর ক্যাম্পে হামলা চালায় মাওবাদীরা। মৃত্যু হয় ২৪ জন জওয়ানের। পাল্টা গুলিতে মৃত্যু হয় পাঁচজন মাওবাদীর। এই হামলার ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত ছিলেন অর্ণব দাম ওরফে বিক্রম। সেসব এখন অতীত। এখন থেকে সাফল্য ধরা দিয়েছে জীবনে। গুলি–বন্দুক–বোমার শব্দ এখন আর ভাল লাগে না অর্ণবের। বই তাঁকে আলাদা আনন্দ দেয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে এই মামলায় সাজা ঘোষণা করে আদালত। যাবজ্জীবন জেলের সাজা হয় অর্ণব দামের। গত মার্চ মাসে তাঁকে মেদিনীপুর সংশোধনাগার থেকে নিয়ে আসা হয় চুঁচুড়া সংশোধনাগারে। সাজা ঘোষণার সময় বিচারককে পিএইচডি করার কথা জানান অর্ণব। চুঁচুড়া জেলে এসেও জেল কর্তৃপক্ষকে সেই ইচ্ছের কথা জানান। সংশোধনাগারের লাইব্রেরি থেকে বই নিয়ে পড়াশোনাও শুরু করে প্রমাণ দিলেন মেধার।
এছাড়া ইন্দিরা গান্ধী মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তরের ডিগ্রি পেয়েছেন অর্ণব দাম। তারপর নিয়ম মেনেই পিএইচডি’র আবেদন করেন একদা মাওবাদী অর্ণব। ইন্টারভিউ দেন। তারই ফলপ্রকাশ হয়েছে। সেখানেই প্রথম নাম অর্ণব দাম। অবসরপ্রাপ্ত বিচারকের ছেলে অর্ণব বরাবরই মেধাবী। খড়গপুর আইআইটিতে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তেন। গড়িয়ার বাসিন্দা অর্ণব হঠাৎ নিরুদ্দেশ হয়ে যান। বেশ কয়েকবছর পর মাওবাদী নেতা হিসেবে নাম সামনে আসে অর্ণবের। সেখানে তাঁর নাম হয় বিক্রম। মাওবাদী নেতা কিষেনজির ঘনিষ্ঠও ছিলেন। ২০১২ সালে আসানসোলে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। প্রায় ৪০ বছর বয়সে অর্ণব সেট পরীক্ষা পাশ করেছেন। ২২০ জন আবেদনকারীর মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছেন অর্ণব।