পাত্রের শিক্ষা, সম্পত্তি থেকে চাকরি—সবই আছে। তাও তাঁর বিয়ে হচ্ছে না বলে খবর। অনেক দেখাশোনা করেও পাত্রের বিয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এই সমস্যা কোনও একজন পাত্রের নয়। এই সমস্যা দেখা গিয়ে গ্রামের অধিকাংশ বিবাহযোগ্য যুবকের। ফলে অনেকেই ফিল্মি গান গেয়ে উঠছেন—‘বাবা আমার কি বিয়ে হবে না’। আবার কেউ গাইছেন—‘আর কত রাত একা থাকব।’
বিষয়টি ঠিক কী ঘটেছে? স্থানীয় সূত্রে খবর, এই গ্রামের ছেলেরা শিক্ষিত, দেখতে–শুনতে ভাল এবং সম্পত্তি থাকা সত্ত্বেও পাত্রীরা বিয়ে করতে রাজি হচ্ছেন না। ফলে ছেলের বিয়ের জন্য মেয়ে খুঁজতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন পাত্রপক্ষ। পাত্রীপক্ষ শর্ত দিচ্ছে, ওই গ্রাম ছাড়লে তবেই বিয়ে। নদিয়ার নাকাশিপাড়া ব্লকের অন্তর্গত বীরপুর ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের মোটাবড়িগাছি গ্রামের যুবকদের মাথায় হাত।
সমস্যাটা ঠিক কোথায় হচ্ছে? জানা গিয়েছে, মোটাবড়িগাছি গ্রামের কোনও পাত্রের হাতে মেয়েকে তুলে দিতে রাজি হচ্ছেন না একাধিক পরিবার। সবাই গ্রামের পরিকাঠামোকে দায়ী করেছেন। এই গ্রাম প্রত্যন্ত এলাকায়। তার উপর রাস্তা, পানীয় জলের সুষ্ঠু ব্যবস্থা নেই। বিদ্যুৎ বিভ্রাট নিত্যসঙ্গী। সুতরাং উন্নয়ন এখানে রাস্তায় দাঁড়িয়ে নেই বলেই মনে করছেন পাত্রীদের পরিবার। তাই বিয়ে হচ্ছে না গ্রামের যুবকদের।
ঠিক কী জানা যাচ্ছে? এখানের গ্রামবাসীদের বক্তব্য, বীরপুর ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় প্রায় সাত হাজার মানুষের বসবাস। কিন্তু উন্নয়ন এবং আচ্ছে দিন এখানে পৌঁছয়নি। বেশিরভাগ বাড়িই কাঁচা। চাষবাস এবং পশুপালন এই গ্রামের পুরুষদের পেশা। কিন্তু নতুন প্রজন্মের অনেকেই তা করেন না। গ্রামের প্রাণকেন্দ্রে এসে চাকরি করেন। কেউ ব্যবসা করেন। এখানে দুটো স্কুল আছে। যা পাঁচ থেকে সাত কিলোমিটার দূরে। তাও ধুঁকছে সেই স্কুল। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বলতে বেথুয়াডহরি গ্রামীণ হাসপাতাল। এই প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে যার দূরত্ব ২২ কিলোমিটার। বেশ কয়েকটি গ্রাম পার করলে মিলবে জাতীয় সড়ক। এইসব কারণে এই গ্রামের যুবকদের সঙ্গে বিয়ে দিতে নারাজ পাত্রীদের পরিবার। এখন সবাই আশায় বুক বেঁধেছেন পঞ্চায়েত নির্বাচন বছর ঘুরলেই। মুখ্যমন্ত্রী গ্রামীণ উন্নয়নে জোর দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। এবার যদি কপাল খোলে।