আবারও কুসংস্কারের বলি হতে হল ১০ বছরের নাবালিকা। বাবার একগুয়েমি কেড়ে নিল মেয়ের প্রাণ। অভিযোগ উঠেছে, সাপে কাটা মেয়েকে হাসপাতালে ভরতি করিয়েও বন্ডে ছাড়িয়ে নেয় বাবা। তারপর ওঝার কাছে নিয়ে যায় মেয়েকে! চিকিৎসকদের বদলে সেই ওঝার উপর ‘ভরসা’ করতে গিয়েই প্রাণ গেল ওই শিশুর। মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে হুগলির পাণ্ডুয়ায়। ঘটনা ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা এলাকায়।
পুলিশ জানিয়েয়েছে, মৃতার নাম বৃষ্টি সোরেন (১০)। ঘটনার সূত্রপাত হয় গত বুধবার। স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দিন ইটাচুনার পদ্মপুকুরের বাসিন্দা রাজু সোরেনের ১০ বছরের মেয়েকে সাপে কামড়ায়। প্রথমে তাকে ইটাচুনা পরে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে ভরতি করানো হয়। গত শুক্রবার হাসপাতাল থেকে বন্ড দিয়ে মেয়েটিকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায় তার বাবা। এরপর থেকেই জিরাটের এক ওঝার কাছে ওই শিশুর চিকিৎসা চলছিল। শনিবার রাতে বৃষ্টির শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে স্থানীয় এক হাতুড়ে তাকে স্যালাইন দেয়। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। রবিবার সকালে ইটাচুনা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা বৃষ্টিকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এরপর ফের বাড়ি নিয়ে এসে সোমবার দুপুর পর্যন্ত ওঝার কাছেই চিকিৎসা করায় পরিবার। বিষয়টি জানতে পেরে এদিন দুপুরে ঘটনাস্থলে যায় পাণ্ডুয়া থানার পুলিশ। তারপর মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়।
এই ঘটনায় স্থানীয় ইটাচুনা খন্যান স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ, রবিবার মেয়েটিকে যখন ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন, তখন মরদেহ পরিবারের কাছে ফিরিয়েও দেওয়া হয়। সাধারণত এমনটা হওয়ার কথা নয়। গোটা ঘটনা ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়।
এপ্রসঙ্গে পাণ্ডুয়ার বিএমওএইচ মেহবুব হোসেন বলেন, ‘ইটাচুনা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ঠিক কী হয়েছে, খোঁজ নেব। তবে বিষাক্ত কিছুর কামড়ে ওই মেয়েটির চিকিৎসা করানো হচ্ছিল। কিন্তু মেয়েটির পরিবার হাসপাতাল থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায় তাকে। ঝাড়ফুক করা হচ্ছিল বলে শুনেছি। মানুষের মধ্যে সাপের কামড় নিয়ে সচেতনতা তৈরিতে যে প্রচার করা হয়, সেই বিষয়টি আরও জোরাল করা হবে।’
পাণ্ডুয়া পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি সঞ্জয় ঘোষ বলেন, ‘এখনও মানুষের মধ্যে কুসংস্কার কাজ করছে। আমরা এবিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব। মেয়েটির মৃত্যু অত্যান্ত দুর্ভাগ্যজনক।’
তবে মৃত শিশুর বাবা রাজুর দাবি, ওঝার ঝাড়ফুকে নাকি মেয়ের পা নড়ে উঠেছিল! তাঁর কথায়, ‘ ওঝার চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছিল মেয়ে। তার পর যে কি হয়ে গেল! আর ওই ওঝার বক্তব্য, ওই মেয়ে বেঁচে উঠবে। আমরা এইভাবেই চিকিৎসা করে থাকি। তাঁছাড়া হাসপাতালে তাঁর মেয়ে বাঁচবে, এমনটা কেউ বলেনি। কারণ, সেখানে চিকিৎসাই হচ্ছিল না!