বিমল গুরুং ভেবেছিলেন তাঁর আত্মপ্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই পাহাড়বাসী গান ধরবে, ‘তুমি আসবে বলে আকাশ মেঘলা বৃষ্টি এখনও হয়নি.............।’ কিন্তু বিষয়টা একদমই সেরকম হয়নি। বরং দার্জিলিংয়ের পর এবার কালিম্পংয়ে বিক্ষোভের ঢেউ আছড়ে পড়ল৷ বিমল গুরুংয়ের বিরুদ্ধে কালিম্পং শহরে বিরাট মিছিল করলেন বিনয় তামাং, অনীত থাপার সমর্থক মোর্চা কর্মীরা। এখান থেকেই বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না যে, বিমলকে মেনে নিতে রাজি নয় তামাং–থাপারা। একইসঙ্গে পাহাড়ে শুরু হয়ে গিয়েছে নানা ধরনের বিক্ষোভ, মিছিল এবং কর্মসূচি। এভাবেই বিমল বিরোধী হাওয়া জোরালো করা হচ্ছে।
মিছিল থেকে পাহাড়ে বিমল গুরুংয়ের বিরুদ্ধে ফের আওয়াজ তোলা হয়েছে। মিছিলে যোগদানকারীদের দাবি, বিমল পাহাড়ে ফিরে এলে নতুন করে অশান্তির কালো মেঘ দেখা দেবে। ২০১৭ সালের আন্দোলনে প্রাণ, সম্পত্তির নষ্টের হিসেব চুকিয়ে তবেই বিমলকে পাহাড়ে আসতে হবে। কালিম্পং মেলা গ্রাউন্ড থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে গোটা শহর ঘুরে ডম্বরচকে এসে শেষ হয়। সেখানে সভাও করেন মোর্চা কর্মীরা। সেখানে কেউ বিমলকে খাল কেটে ডেকে নিয়ে আসার পক্ষে মত দেননি। বরং বিমলকে কোণঠাসা করে দেওয়ার বার্তাই এখান থেকে উঠে এসেছে।
যুব মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির সহ–সচিব ইমন চামলিং বলেন, ‘পাহাড় এখন শান্ত রয়েছে। শান্ত থাকুক, এটাই পাহাড়বাসী চান। আর বিমল গুরুংয়ের লোকজন তা চান না। আবার অশান্তির মেঘ পাহাড়ে জমছে। তার বিরুদ্ধে সবাইকে এবার একজোট হয়ে সরব হতে হবে।’ বিমলের কর্তৃত্ব অনেকেই মেনে নিতে রাজি নন। সেই বার্তা দিতেই পাহাড়ে এখন এই মিছিল, বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু হয়েছে।
উল্লেখ্য, তিন বছর আত্মগোপন করে থাকার পরে ২১ অক্টোবর কলকাতায় আত্মপ্রকাশ করেন বিমল গুরুং। ঘোষণা করেন তৃণমূলকে সমর্থনের কথাও। তার পরদিন থেকেই পাহাড়ে বিমলের সমর্থনে তাঁর সমর্থকেরা সরব হতে থাকেন। পোস্টার দিয়ে বিমলকে পাহাড়ে স্বাগত জানানোর কথা বলা হয়। তার পরেই আসরে নামেন বিনয়–অনীতের সমর্থকেরা। দার্জিলিং চকবাজার বিমলের পতাকা আবার সরিয়ে দেওয়া হয়। ২৫ অক্টোবর প্রথম বিমল–বিরোধী মিছিল হয় দার্জিলিংয়ে। এবার একই মিছিল হল কালিম্পংয়ে।
মোর্চা কর্মীরা জানান, ২০১৭ সালে বিনয় তামাং, অনীত থাপা যে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা আজ প্রমাণিত। পাহাড়ের শান্তি, বিকাশ, উন্নয়ন এবং ভবিষ্যতের কথা ভেবে তাঁরা ওই কাজ করেছিলেন। বিমল তখন এদের বিশ্বাসঘাতক বলেছিলেন। এখন বাড়ি ফেরার জন্য উল্টো কথা বলে তৃণমূলের পাশে এসেছেন। এখন পাহাড়জুড়ে দুই গোষ্ঠীর পৃথক রাস্তা কাঞ্চনজঙ্ঘা হয়ে ডেলো ছাড়িয়ে কোনদিকে যায় সেটাই দেখার।