মা যত দিন বেঁচে ছিলেন, ছেলেমেয়েরা তাঁর কোনও খোঁজ খবর নিতেন না। অসহায় বৃদ্ধা দু'বেলা দু'মুঠো অন্ন জোগাড় করতে পারছেন কিনা, সেই খবরও নিতেন না তাঁর কীর্তিমান সন্তানরা। অথচ, সেই মায়েরই যখন মৃত্যুর খবর জানতে পারলেন, সুড় সুড় করে মায়ের ঘুপচি ঘরে চলে এলেন তাঁরাই।
আর তারপরই সামনে এল এমন এক ঘটনা, যা দেখে চোখ কপালে উঠল অকৃতজ্ঞ ছেলেমেয়েদের। ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেলেন প্রতিবেশীরাও। কারণ, 'সহায় সম্বলহীন' ওই বৃদ্ধার ঘর থেকেই পাওয়া গিয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকা, তাও নগদে!
রবিবার সকালে এই ঘটনা ঘটে মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলায়। এই এলাকারই বেলিয়াচক পাড়ার বাসিন্দা ছিলেন আসেনূর বেওয়া। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, বৃদ্ধা আসেনূরের সন্তানরাও তাঁর আপন ছিলেন না। তাঁরা বৃদ্ধার কোনও দেখাশোনা করতেন না।
ফলত, ভিক্ষা করেই দিন গুজরান করতেন আসেনূর বেওয়া। লোকের বাড়ি খাবার চেয়ে খেতেন। একথায় চরম কষ্ট ও যন্ত্রণার মধ্যে দিন কাটত বৃদ্ধার।
এই অবস্থায় শনিবার আসেনূর বেওয়ার মৃত্যু হয়। স্থানীয় সূত্রের জানা গিয়েছে, দীর্ঘকাল ধরেই বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যা ছিল তাঁর। মৃত্যুর কারণও বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন অসুখ।
এরপর একপ্রকার বাধ্য হয়ে আসেনূরের ছেলেমেয়েকে খবর তাঁর মৃত্যুর খবর পাঠান পাড়া পড়শিরা। মা মারা গিয়েছেন শুনেই সুড় সুড় করে মায়ের বাড়িতে এসে একে একে জড়ো হতে থাকেন প্রয়াত আসেনূরের ছেলেমেয়েরা। এরপর তাঁদের মনে হয়, মায়ের ঘরটা একবার খানাতল্লাশি করা দরকার! বলা তো যায় না, যদি কিছু কাজের জিনিস থাকে!
যা ভাবা, তাই কাজ। এরপর আসেনূর বেওয়ার সমস্ত ঘর তল্লাশি করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের সামনেই চলতে থাকে সেই 'অভিযান'। আর তাতেই দেখা যায়, আসেনূরের ঘরের বিভিন্ন জায়গায় সযত্নে জমিয়ে রাখা রয়েছে অসংখ্য খুচরো পয়সা এবং নানা মূল্যের নোট। তাতে ১ থেকে ১০ টাকার কয়েন যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে - ১০০, ২০০ ও ৫০০ টাকার নোট! সব মিলিয়ে যার পরিমাণ - ২ লক্ষ ২৩ হাজার ৪১৪ টাকা!
এলাকাবাসীর অনুমান, আসেনূর ভিক্ষা করে যা রোজগার করতেন, তার বেশিরভাগটাই এভাবে জমিয়ে রেখেছিলেন। যা একটা সময় লক্ষ টাকাও ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু, বৃদ্ধা যে এত টাকা জমিয়ে ফেলেছেন, সেটা কি তিনি বুঝতে পেরেছিলেন? এর উত্তর কারও জানা নেই।
তবে, স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনায় ব্যাপক শোরগোল পড়ে যায় গোটা এলাকায়। যদিও উদ্ধার হওয়া এই অর্থ কার বা কাদের জিম্মায় গেল, সেই বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু জানা যায়নি।