মর্গের ফ্রিজ বিকল হয়ে নরককুণ্ড হয়ে উঠল বোলপুর মহকুমা হাসপাতাল চত্বর। একে মর্গে তিল ধারনের জায়গা নেই। তার উপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে একাধিক দেহ। এই অবস্থায় ফ্রিজ বিকল হয়ে পড়ায়, তার মধ্যে থাকা দেহগুলো পচে দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করেছে। গন্ধের চোটে ওই চত্বরে টেকা দায় হয়ে পড়েছে রোগীদের। ফলে দুর্গন্ধে নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড় হাসপাতালের রোগী ও চিকিৎসকদের। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মর্গের ফ্রিজ বিকল হয়ে পড়ায় এই বিপত্তি ঘটেছে।
চারদিন আগে হাসপাতালে দেখাশোনার দায়িত্ব প্রাপ্ত সংস্থা দুই বিশেষজ্ঞকে নিয়ে এসে ঠিক করালেও আবার চারদিন আগে থেকে মর্গের ফ্রিজ বিকল হয়ে যাওয়ায়, তীব্র দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয় হাসপাতাল চত্বরে।
বৃহস্পতিবার এই দুর্গন্ধের কারণে কাজ করতে গিয়ে প্রবল অসুবিধার সম্মুখীন হন ডাক্তার ও নার্সরা। দ্রুত ওই ফ্রিজ ঠিক করার জন্য জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি ওই পচতে থাকা মৃতদেহগুলিকে সৎকার করার ব্যবস্থা জন্য জানানো হয়েছে বোলপুর প্রশাসনিক মহলেও।
ঘটনার প্রেক্ষিতে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার দীপেন্দু দত্ত বলেন, ‘ গতবছর লকডাউনের সময়ও মর্গের ফ্রিজ খারাপ হয়ে গিয়েছিল। সেই সময় সংস্কারও করা হয়। তবে সেই কাজ সঠিক হয়নি। সেকারণে আবার ফ্রিজ বিকল হয়ে পড়েছে। দুর্গন্ধ এতো ছড়িয়েছে যে শিশু বিভাগ ও প্রসূতি বিভাগে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। চিকিৎসক, নার্স, রোগী, তাঁদের পরিজন সকলেই ভুগছেন। আগামীকালও এই রকম পরিস্থিতি থাকলে ভর্তি নেওয়া বন্ধ করে দিতে হবে।’
ফ্রিজ সারাইয়ের সংস্থাকে খবর দেওয়া হয়েছে। এখন মর্গে পাঁচটি বেওয়ারিশ লাশ পড়ে রয়েছে। দু’টি বোলপুর ও তিনটি শান্তিনিকেতন থানার। হাসপাতালের তরফে দুই থানাতেই খবর দেওয়া হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত পুলিশের তরফ থেকে কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি। এদিকে ৩ তারিখে ফ্রিজার বিকল হয়ে পড়ে। ৭ তারিখ থেকে দেহগুলো পচে দুর্গন্ধ বের হতে শুরু করে। তবে এদিন দুর্গন্ধের চোটে টেকা দায় হয়ে পড়েছে। আশঙ্কা রয়েছে, যদি এভাবেই দেহগুলো পড়ে থাকে তাহলে, হাসপাতাল বন্ধ করে দিতে হবে।’
অন্য দিকে, জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হিমাদ্রি আড়ি বলেন, ‘ হাসপাতালের সুপার আমাকে বিষয়টি জানিয়েছেন। হাসপাতালের তরফ থেকে বিষয়টি বীরভূমের জেলাশাসক বিধান রায় ও জেলা পুলিশ সুপার নগেন্দ্র ত্রিপাঠিকে জানানো হয়েছে। দ্রুত যাতে ওই দেহগুলি সৎকার করা যায়, তার ব্যবস্থা করা হবে।’
প্রসঙ্গত, ওই মর্গের কাছেই রয়েছে শিশু ও মহিলাদের ওয়ার্ড। এমনকী, প্রসূতি বিভাগও একই জায়গায় রয়েছে। ফলে, গর্ভবতী মহিলা ও সদ্যজাত শিশুদের স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকার হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেকারণে ওই দুই বিভাগকে অনত্র সরিয়ে দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালের দাবি, ফ্রিজ রক্ষণাবেক্ষণকারী সংস্থাকে ইতিমধ্যেই তলব করেছে হাসপাতাল। তবে করোনা আবহে এই ঘটনা ঘটায় ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়েছে হাসপাতাল চত্বর জুড়ে। ঘটনার জেরে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন রোগী ও তাঁদের আত্মীয়রা। তাঁদের দাবি, হাসপাতালের মধ্যে যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে।