রাতের অন্ধকারে এগলি ওগলি দিয়ে রুদ্ধশ্বাসে হেঁটে আসছেন দুই মহিলা। মুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। নিজেদের গ্রামের বাড়ি ছেড়ে শহরে আসার প্রবল চেষ্টা। কিন্তু কেন? এই প্রশ্নের সন্ধানে নামতেই জানা গেল, ওয়ার্ড কো–অর্ডিনেটরকে ভয় পেয়েই এমন কঠিন পথ ধরতে হয়েছে। কিসের ভয়? জানা গেল, মারধর–জরিমানায় প্রাণ ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন মা–মেয়ে। এখন তাঁরা কলকাতায়। এই ওয়ার্ড কো–অর্ডিনেটর তাঁদের কাছ থেকে মুচলেকা লিখিয়ে নিয়ে হুমকি দিয়েছে বলেও অভিযোগ। ঘটনাটি ঘটেছে ডায়মন্ড হারবারের রাজার তালুক এলাকায়।
ঠিক কী ঘটেছে অভিষেকের কেন্দ্রে? স্থানীয় সূত্রে খবর, মহিলার নাম কল্পনা বর। তিনি শুক্রবার রাতে তাঁর বিকলাঙ্গ ছেলের খোঁজে বেরোন। আর পাড়ার কালীপুজোর প্যান্ডেলে যান। কিন্তু ছেলেকে পাননি। তখন তিনি বাড়ি ফিরে আসেন। আর মেয়ে পূজার সঙ্গে খেতে বসেন। তখনই বাড়ির দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে নিয়ে ওয়ার্ড কো–অর্ডিনেটর কাকলি বর হাজির। তাঁদের বাড়ি থেকে পাড়ার পঞ্চানন মন্দিরের কাছে নিয়ে আসা হয় মা–মেয়েকে। সেখানে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। এই কো–অর্ডিনেটর অভিযোগ তোলেন, কল্পনা বর অন্য এক পুরুষের সঙ্গে আপত্তিজনক অবস্থায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাতেই আতঙ্কিত হয়ে কল্পনা মেয়েরে নিয়ে কলকাতার বাপের বাড়িতে চলে আসেন।
এখানকার সাংসদ হলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনা নিয়ে এখন জোর চর্চা শুরু হয়েছে। কিন্তু একাংশ মানুষ কো–অর্ডিনেটরের ভয়ে মুখ খুলতে পারছেন না। এলাকা জুড়ে চাপা উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। পুলিশও এই ঘটনা নিয়ে কোনও উদ্যোগ নিচ্ছেন না। কারণ সেখানে কোনও লিখিত অভিযোগ জমা পড়েনি।
আর আক্রান্ত কল্পনা বর অভিযোগ করেছেন, ওই রাতে মা–মেয়ের মাথা ন্যাড়া করার ব্যবস্থা করেছিল। কো–অর্ডিনেটর সালিশি সভা বসিয়ে মারধর করেন। এমনকী পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একই সঙ্গে কাকলি গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার নিদান দেন। থানায় গেলে কোন লাভ হবে না বলা হয়। এখন বাড়িতে তাঁর স্বামী দীপক এবং প্রতিবন্ধী ছেলে পবিত্র রয়েছে। যদিও কো–অর্ডিনেটর কাকলি বর বলেন, ‘সব কিছু জানতে গেলে গ্রামে আসতে হবে। ফোনে বলব না।’