আজ তিনি 'সর্বহারা'! তবুও সোমবার কাঁকসা থানা থেকে বেরোনোর মুখে চোয়াল শক্ত করে মেয়ের 'খুনি'দের শাস্তি চাইলেন সুতন্দ্রা চট্টোপাধ্য়ায়ের মা তনুশ্রী চট্টোপাধ্যায়। তাঁর স্বামী সুকান্ত চট্টোপাধ্যায় ছিলেন রেলের ঠিকাদার। মাস আটেক আগেই মারা যান ক্যান্সার আক্রান্ত সুকান্ত। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে নিজের একমাত্র অবলম্বন - একমাত্র সন্তানকে হারালেন তনুশ্রী! তাও এমন নির্মমভাবে!
রবিবার সন্ধ্যায় গাড়িতে চন্দননগর থেকে গয়ার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন সুতন্দ্রা। কাজে যাচ্ছিলেন। সেই সময়েও তিনি হাসিখুশিই ছিলেন। আর সোমবার সকালে সেই প্রাণবন্ত মেয়েরই মৃত্যুসংবাদ পেলেন তনুশ্রী। তাঁর স্বামী গত হওয়ার পর বাড়ির সদস্য বলতেন ছিলেন চারজন। সুতন্দ্রা, তাঁর মা তনুশ্রী এবং তনুশ্রীর মা ও শাশুড়ি!
সুতন্দ্রা ছোট থেকেই নাচতে ভালোবাসতেন। বড় হয়ে সেই নাচকেই পেশা হিসাবে বেছে নেন তিনি। নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। বাবার মৃত্যুর পর পরিবারের বাকি তিন প্রবীণার খেয়ালও তাঁকেই রাখতে হত। এমনকী, পথকুকুরদের সঙ্গেও তাঁর ভারী বন্ধুত্ব ছিল। সেই মেয়ে আজ আর নেই। মত্ত ইভটিজারদের হাত থেকে বাঁচতে তাঁর মেয়েকে প্রাণ দিতে হয়েছে, একথা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তনুশ্রী।
এদিন (সোমবার - ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫) বেলা ১২টা নাগাদ কাঁকসা থানায় পৌঁছন চন্দননগরের বাসিন্দা তনুশ্রী। ততক্ষণে সুতন্দ্রার নিথর দেহও সেখানে পৌঁছে গিয়েছে। মেয়েকে সাদা কাপড়ে মোড়া অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি প্রৌঢ়া। ডুকরে কেঁদে ওঠেন তিনি। বলেন, '৮ মাস আগে স্বামীকে হারিয়েছি, এবার মেয়েটাকেও কেড়ে নিল ওরা!'
এক মায়ের এই অসহায় হাহাকার দেখে সেখানে উপস্থিত বাকিদেরও তখন চোখের জল বাঁধ মানতে চাইছে না। পরিচিতরা কেউই এই মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না। সন্তান হারানোর যন্ত্রণা বুকে নিয়েই এদিন তনুশ্রী বলেন, 'মেয়েই আমার সব ছিল। যাদের জন্য ওকে চলে যেতে হলে, তারা যেন শাস্তি পায়।'
একই দাবি তুলেছেন চন্দননগর পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহিত নন্দী। তিনি জানান, সুতন্দ্রার বাবা সুকান্ত তাঁর সহপাঠী ছিলেন। সেই সহপাঠীকে তিনি হারিয়েছেন, এখনও একবছরও হয়নি। সুতন্দ্রা তাঁর কন্যাতুল্য। সেই মেয়েরও যে এমন নির্মম পরিণতি হবে, তা কিছুতেই ভাবতে পারছেন না মোহিত। এদিন তিনি সুতন্দ্রাদের বাড়িতেও গিয়েছিলেন। মোহিত বলেন, 'যা শুনছি, সেটা যদি সত্যি হয়, তাহলে এই ধরনের দুষ্কৃতীদের ক্ষমা করা উচিত নয়।'