গুড ফ্রাইডের ছুটিতে সপরিবারে মাংস খাওয়ার পরিকল্পনা ছিল বাগনানের নাউলের বাসিন্দা রিঙ্কা মণ্ডলের (৩২)। তাই বাড়িতে মাংস কিনে রেখে মেয়ে রিমিকে (৫) নিয়ে কেনাকাটা করতে বেরিয়েছিলেন রিঙ্কাদেবী। কিন্তু মা ও মেয়ের আর বাড়ি ফেরা হল না। বাগনান স্টেশনের ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে মেয়েকে নিয়েই মালগাড়ির নীচে ঝাঁপ দিলেন মা। দু’জনেরই মৃত্যু হয়েছে। এই মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী হয়েছেন বলে রেল পুলিশের কাছে জানিয়েছেন বাগনান স্টেশনের অনেক যাত্রী। পারিবারিক অশান্তির জেরেই কি এই সিদ্ধান্ত নিলেন যুবতী? তদন্তে নেমেছে পুলিশ।
এদিকে বাগনান জিআরপি মৃতদেহ দু’টি ময়নাতদন্তের জন্য উলুবেড়িয়ার শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠিয়েছে। গোটা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বাগনান স্টেশন দিয়ে একটি মালগাড়ি যাওয়ার সময় ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে বসে থাকা রিঙ্কা মণ্ডল মেয়ে রিমিকে নিয়ে মালগাড়ির সামনে ঝাঁপ দেন। ঘটনাস্থলেই মায়ের মৃত্যু হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় মেয়েকে প্রথমে বাগনান গ্রামীণ হাসপাতালে এবং পরে উলুবেড়িয়া মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
পুলিশ কী তথ্য পেয়েছে? অন্যদিকে পুলিশ সূত্রে খবর, দক্ষিণ–পূর্ব রেলের খড়্গপুর শাখার বাগনান স্টেশনে মৃত যুবতী মায়ের নাম রিঙ্কা মণ্ডল (৩২) এবং তাঁর শিশুকন্যা রিমি মণ্ডল (৬)। শ্যামপুরের নাউলের বাসিন্দা রিঙ্কা সেখানকার একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন। রিমি ওই স্কুলেই প্রথম শ্রেণিতে পড়ত। বাড়ি লাগোয়া অংশে তাঁদের একটি চায়ের দোকান রয়েছে। সেটি চালান তাঁর স্বামী মিন্টু মণ্ডল। কেনাকাটার নাম করে রিঙ্কাদেবী মেয়েকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। তাঁর ব্যাগে নতুন জামাকাপড় পাওয়া গিয়েছে। একঘণ্টা মেয়েকে নিয়ে বাগনান স্টেশনে বসেছিলেন মা। তখন মেয়েকে চিপস ও জল খাওয়ান মা। দুপুরের দিকে আপ লাইনে একটি মালগাড়ি এলে ওই গৃহবধূ মেয়েকে নিয়ে তার সামনে ঝাঁপ দেন।
আর কী জানা যাচ্ছে? তদন্তে নেমে পুলিশ তথ্য পেয়েছে, কোনও একটি বিশেষ কারণে মন খারাপ ছিল রিঙ্কা দেবীর। যা তিনি কাউকে বলতে পারেননি। সেটা কী তা খতিয়ে দেখতে তদন্তে নেমেছেন বাগনান রেল পুলিশের অফিসাররা। তবে পারিবারিক বিবাদের জেরেই এই ঘটনা বলে প্রাথমিক অনুমান পুলিশের। রিঙ্কার এক আত্মীয় সূত্রে খবর, গুড ফ্রাইডে’র দিনে স্কুলে ছুটি থাকায় তাঁরা মাংস রান্নার পরিকল্পনা করেছিলেন। তাই তাঁর স্বামী বাজার করে আনেন সকালে। দীর্ঘক্ষণ স্ত্রী ও মেয়ে বাড়ি না ফেরায় মিন্টু স্ত্রী’র মোবাইলে ফোন করেন। এমনকী শ্বশুরবাড়িতেও ফোন করে বিষয়টি জানান। পরে জিআরপি’র পক্ষ থেকে মিন্টুকে ফোনে দুঃসংবাদটি জানানো হয়।