মাত্রাছাড়া সংক্রমণের ধাক্কায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। রাজ্যের জেলাগুলোতে দৈনিক গড়ে ৫০০ থেকে ৭০০ জন করে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। অথচ এত সংখ্যক করোনা রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছে দিতে যতগুলি অ্যাম্বুল্যান্স থাকার প্রয়োজন, সেই তুলনায় অ্যাম্বুল্যান্সের সংখ্যা অত্যান্ত কম থাকায়, রোগীদেরকে হাসপাতালে পৌঁছে দিতে বেগ পেতে হচ্ছে স্বাস্থ্যকর্মীদের বলে অভিযোগ উঠেছে। সে কারণে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে জেলায় জেলায় অ্যাম্বুল্যান্সের আকাল দেখা দিয়েছে।
সেকারণে শনিবার অ্যাম্বুল্যান্স সংস্থাগুলোর সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে বৈঠক করেছেন স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকেরা। এই বৈঠকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, করোনা পরিষেবায় যাতে ব্যাঘাত না ঘটে সেজন্য আগামী সপ্তাহের মধ্যে যাতে আরও ৫০০টি অ্যাম্বুল্যান্স চালু করা যায়, সেই ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।
অ্যাম্বুল্যান্সের অভাবে করোনা আক্রান্ত রোগীদের সঠিক সময় হাসপাতলে কিংবা সেফ হোমে পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করছেন রোগীর আত্মীয়-স্বজনেরা। সেজন্য স্বাস্থ্য ভবনের কাছে মরিয়া হয়ে বাড়তি অ্যাম্বুল্যান্স চেয়ে পাঠিয়েছে একাধিক জেলা প্রশাসন। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ১০২ নম্বরে ফোন করলে যে অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা পান রোগীরা, সেই অ্যাম্বুল্যান্সের সংখ্যা এখন মাত্র ৪৮৩টি। যা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যান্ত নগন্য বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকরাই। আবার এই অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা শুধু কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর মধ্যেই সীমিত রয়েছে। অথচ এক একটি জেলায় ৫০০ থেকে ৭০০ জন করে দৈনিক গড়ে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। তাঁদের অনেককেই সেফ হোম কিংবা হাসপাতালে নিয়ে যেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে রাজ্যের হাসপাতালগুলোকে।
বিশেষ করে কলকাতা থেকে যে জেলাগুলির অবস্থান অনেকটাই দূরে, সেই জেলাগুলোর অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। সে কারণেই একাধিক জেলা প্রশাসন স্বাস্থ্য ভবনের কাছে ১০২ অ্যাম্বুল্যান্স চেয়ে পাঠিয়েছে। এই জায়গায় অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন যে, যখন প্রথম ঢেউয়ের সময় অ্যাম্বুল্যান্সের আকাল দেখা দিয়েছিল, আবার দ্বিতীয় ঢেউ আসার ইঙ্গিত আগে থেকেই পাওয়া গিয়েছিল। সেক্ষেত্রে কেন তখনই অ্যাম্বুল্যান্সের সংখ্যা বাড়ানো হল না। এমনকী, অ্যাম্বুল্যান্স পরিকাঠামোরও কোনও উন্নতি করা হয়নি বলেও অভিযোগ করেছেন স্বাস্থ্য বিষয়ক ওয়াকিবহালরা।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘সমস্যা তো আছেই। অতীতের সব ক্ষেত্রেই এই রকম ঘটনা ঘটেছিল। আমরা দ্রুত গাড়ি বানানোর চেষ্টা করছি।’ অবশ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা জানিয়েছেন, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, রোগীদের তরফে এমন কিছু আচরণ করা হচ্ছে, যার জন্য অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা মসৃণভাবে চলার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।তিনি আরও জানান, অনেক সময় দেখা গিয়েছে, করোনা আক্রান্তের পরিবারের সদস্যরা স্বাস্থ্য দফতরের অ্যাম্বুল্যান্সে ফোন করার সময় রোগীর প্রকৃত বিবরণ দিচ্ছেন না। রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য ঘটনাস্থলে গিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা দেখতে পাচ্ছেন যে, তিন চার তলার আবাসনের উপর থাকেন রোগী। তাঁকে স্ট্রেচারে করে নীচে নামানোর প্রয়োজন হলেও পরিবার বা প্রতিবেশীরা কেউ এগিয়ে আসছেন না। সেক্ষেত্রে অল্প সংখ্যক স্বাস্থ্যকর্মীরা রোগীকে নামাতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন। আবার করোনা আক্রান্ত হওয়ার জন্য ওই রোগীর ধারে কাছে ঘেঁষছেন না পড়শিরা। এই পরিস্থিতির বিষয়ে যদি আগে থেকে জানা থাকত, তাহলে অন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারত স্বাস্থ্য দফতর।প্রয়োজনে বেশি সংখ্যক কর্মীদের পাঠিয়ে এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হত। এমনকী অনেক সময় দেখা যাচ্ছে, হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরও রোগীদের ভরতি করতে দীর্ঘ প্রক্রিয়ার কারণেও অ্যাম্বুল্যান্সগুলো একটা রোগীর জন্য আটকে পড়ছে। সেক্ষেত্রেও সঠিক সময়ে অন্য রোগীর কাছে গাড়ি পৌঁছানোর পরিষেবা জোর ধাক্কা খাচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।