চারদিন কেটে যাওয়ার পর অবশেষে খোঁজ মিলল। ভাগীরথী নদী থেকে এবার উদ্ধার হল নিখোঁজ নার্সের দেহ। শনিবার বেশি রাতে বালিধাবড়া ঘাট থেকে ওই নার্সের দেহ উদ্ধার করল বহরমপুর থানার পুলিশ। দেহ উদ্ধার হতেই নার্সের মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। অনেকে দাবি করে বসলেন, ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে নার্সকে। আর তারপর নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে। মৃত নার্সের নাম সুচিত্রা মণ্ডল(২৩)। সুচিত্রা আত্মহত্যা করেননি বলে দাবি করেছেন পরিবারের সদস্যরা। এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। বুধবার নার্সিংহোমে ডিউটি শেষ করে আর মেসে ফেরেননি সুচিত্রা মণ্ডল।
বুধবার ডিউটি করার পর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন ওই যুবতী নার্স। বহরমপুরের কোদালা গ্রামে বাড়ি সুচিত্রা মণ্ডলের। বহরমপুরে একটি নার্সিংহোমে দু’বছর ধরে নার্স হিসেবে কাজ করতেন। ওখানের একটি মেসে থাকতেন। বুধবার রাত সাড়ে ৮টার সময় ডিউটি শেষ করে নার্সিংহোম থেকে বের হন তিনি। তারপর আর তাঁর খোঁজ মেলেনি। বুধবার রাতে ভাগীরথী নদীর ব্রিজে পড়েছিল এক জোড়া জুতো। ওই জুতো সুচিত্রার বলে জানান তাঁর মা। সপ্তাহে দু’দিন বাড়ি যেতেন। কিন্তু গত বুধবার রাতে মাকে শেষ ফোন করে সুচিত্রা জানান, তিনি ডিউটি সেরে মেসে ফিরছেন। বৃহস্পতিবার বহরমপুর থানা থেকে সুচিত্রার পরিবারকে ডেকে পাঠানো হয়।
আরও পড়ুন: ‘থ্রেট কালচার’থেকে পরীক্ষায় নম্বর কারচুপির অভিযোগ, তদন্ত কমিটি গঠন বর্ধমান হাসপাতালে
এরপর মৃতের মা সোনালি মণ্ডল মেয়ের জুতো দেখে শনাক্ত করেন। সুচিত্রা গঙ্গায় ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে সন্দেহ করা হয়। তবে সোনালি দেবী বলেন, ‘মেয়ে আমাকে ফোনে জানাল সে মেসে ফিরছে। তাহলে ব্রিজে কেমন করে গেল? আমি মিসিং ডায়েরি করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ আমাকে দিয়ে অপহরণের মামলা করিয়েছে। কারও বিরুদ্ধে আমার কোনও অভিযোগ নেই। আমার মেয়ের মৃত্যুর রহস্য বের করা হোক এটাই চাই। মেয়ে একটু চাপা স্বভাবের। তবে কোনও আশঙ্কার কথা বলেনি।’ আর সুচিত্রার বাবা মোহনলাল মণ্ডলের বক্তব্য, ‘মেয়ে সারাদিন কাজ করেছে। সুস্থভাবে নার্সিংহোম থেকে বেরিয়েছে। তাহলে কেন ব্রিজ থেকে ঝাঁপ দেবে? সঠিক তদন্ত করে বের করুক পুলিশ।’
এছাড়া বহরমপুর থানায় অপহরণের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এই ঘটনার তদন্তকারী অফিসার বহরমপুর থানার ইন্দ্রনীল পালের কথায়, ‘ঠিক কী হয়েছিল সেটা এখনও স্পষ্ট নয়। আমরা ঘটনার তদন্ত করছি।’ আর নার্সিংহোমের ম্যানেজার শ্যাম অধিকারী বলেন, ‘গত ৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে নার্সিহোমে আসেন তিনি। সারাদিন ডিউটি করেন। একটু কম কথা বলত। ডিউটি শেষ করে বেরিয়ে গিয়েছে। রাত ১১টার দিকে ওর রুমমেটরা ওকে ফোন করে। আর ফোন বন্ধ পায়। তখন রুমমেটরা মনে করেন, সুচিত্রা বাড়ি ফিরে গিয়েছে। পরদিন সকালে সুচিত্রার বাড়িতে তাঁর রুমমেটরা ফোন করে জানতে পারে, বাড়িও যায়নি সে। তখন আমাকে জানায় তাঁরা।’