করোনাভাইরাসের ধাক্কায় দীর্ঘদিন ধরে ঘরবন এই পরিস্থিতিতে তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্য ও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামের উপর জোর দেওয়া অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা। তাঁদের মতে, এখন কেউ বাইরে যেতে পারছেন না। ফলে, স্বাস্থ্য সংকটে পড়তে হচ্ছে ঘরবন্দিদের। বিশেষ করে শিশুরা ভুক্তভোগী হচ্ছে। খেলাধুলো, দৌড়দৌড়ি ফুসফুসকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করলেও এখন সেগুলো থেকে বঞ্চিত তারা।
তাই শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামের জন্য বিকল্প পদ্ধতি ‘হারমোনিকা মিউজিক থেরাপি’ নিয়ে লড়ছেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে পুরস্কারপ্রাপ্ত হারমোনিকা শিল্পী সোহম মুখোপাধ্যায়। ইতিমধ্যেই তিনি নাক দিয়ে নানা সুরে এই বায়ুনির্ভর বাদ্যযন্ত্রকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাজিয়ে ১৫টিরও বেশি বিশ্বরেকর্ড গড়ে ফেলেছেন। এবার তিনি গৃহবন্দি হয়ে পড়া শিশু ও মহিলাদের ‘দম’ বাড়াতে এগিয়ে এলেন।
সোহমবাবু বলেন, ‘এই সময় যদি আমরা শিশুদের হাতে মাউথ-অর্গান তুলে দিতে পারি, সেটা নিঃসন্দেহে তাদের খেলার যন্ত্রসামগ্রী হয়ে উঠবে। এছাড়া শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যকেও ভালো রাখবে। এছাড়াও ৫৫ বছরের বা তার থেকে বেশি বয়স্ক মানুষেরা যাঁরা করোনা নিয়ে আতঙ্কে ভুগছেন, তাঁরাও এই বাদ্যযন্ত্রে সুবিধা পেতে পারেন।' তিনি আরও বলেন, ‘করোনা আমাদের ফুসফুসে থাবা বসাচ্ছে। সেক্ষেত্রে নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের ক্ষমতা বাড়াতে হারমোনিকা মিউজিক থেরাপি শরীরের পক্ষে উপকারী পদ্ধতি। নিয়মিত মাউথ-অর্গান বাজানোর অভ্যাস করলে, শ্বাস-প্রশ্বাসের উন্নতি হয়। কারণ, এই বাদ্যযন্ত্র শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে সুর সৃষ্টির জন্যই তৈরি হয়েছে। সঠিকভাবে নির্দেশ মেনে যদি দিনের কিছু সময় এটা বাজানো যায়, তাহলে ফুসফুসের উপকার হবেই। একইসঙ্গে ভয় বা অযথা মানসিক অবসাদ কাটাতে তো হবেই।’ তিনি বলেন, ‘পূরক, কুম্ভক ও রেচক - এই তিনটি নাম ভারতীয় যোগের প্রাণবায়ু যোগ অভ্যাস পদ্ধতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সাধারণত নাক, মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস নেওয়াকে পূরক বলে। আবার সেই বায়ু শরীরে একটি নির্দিষ্ট সময় ধারণকে কুম্ভক ও বায়ু বিসর্জনকে রেচক বলা হয়। এই তিনটি পদ্ধতি ব্যবহার করেই মাউথ-অর্গান বাজানো হয়। এতে শরীরের উপর অত্যন্ত কার্যকরী প্রভাব ফেলে। ফুসফুসের ক্ষমতাকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে তোলে। এমনকী, মানসিক চাপ-রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও ধৈর্য বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে। দীর্ঘদিনের পড়াশোনা, পরীক্ষা ও প্রয়োগের মাধ্যমে এটা সুনিশ্চিত করেছি যে, মাউথ-অর্গান বা হারমোনিকা দ্রুত অবসাদ দূর করতেও সক্ষম।’
সোহমবাবু আরও জানান, ২০১৯ সাল থেকেই ৩ মাসের এই অনলাইন কোর্স শুরু করেছেন। কারণ, এখন শারীরিক উপস্থিতিতে ক্লাস করা সম্ভব নয়। তিনি আরও জানান, এখন দেশে বিদেশেও শ্বাস প্রশ্বাসের উন্নতির জন্য বেলুন ফোলানো, শঙ্খ বাজানোর মতো ব্যায়াম করা হচ্ছে।