'দেশের জন্য ছেলে শহিদ হয়েছে। কষ্ট হচ্ছে। তবে কোনও আক্ষেপ নেই।'
জম্মু ও কাশ্মীরের ডোডায় জঙ্গিদের সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে ভারতীয় সেনার ক্যাপ্টেন ব্রিজেশ থাপার (২৭ বছর) শহিদ হওয়ার খবরটা দার্জিলিংয়ের লেবংয়ের বাড়িতে পৌঁছানোর পরে ঠিক সেই কথাগুলিই বললেন বাবা ভুবনেশ কুমার থাপা। কথাগুলির মধ্যে সন্তান হারানোর কষ্ট লুকিয়ে থাকলেও ভারতীয় সেনার প্রাক্তন সেনার কর্নেলের গলায় এক অদ্ভুত গর্ব ছিল। কেউ নিজের সন্তানকে হারিয়ে কীভাবে এতটা গর্বিত হতে পারেন, সম্ভবত সেনার পরিবারের বাবা-মা ছাড়া সেটার কারণ আর কেউ বলতে পারবেন না। তাঁরাই পারেন শুধু। আর সেই অনুভূতির সঙ্গেই শেষবারের মতো নিজের ছেলেকে দেখার অপেক্ষায় আছেন ভারতীয় সেনার প্রাক্তন কর্নেল ভুবনেশ। মঙ্গলবার রাতে বা বুধবার সকালে বিশেষ বিমানে করে বাগডোগরা বিমানবন্দরে ক্যাপ্টেন ব্রিজেশের দেহ আনা হবে। শ্রদ্ধা জানানো হবে বাগডোগরা সেনা ছাউনিতে। তারপর শেষবারের মতো বাড়িতে আনা হবে ক্যাপ্টেন ব্রিজেশের দেহ।
ডোডায় কী হয়েছে?
সোমবার সন্ধ্যায় ডোডায় জঙ্গিদের সঙ্গে গুলির লড়াই শুরু হয় যৌথ নিরাপত্তা বাহিনীর (ভারতীয় সেনার রাষ্ট্রীয় রাইফেলস এবং জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের স্পেশাল অপারেশনস গ্রুপ)। প্রাথমিকভাবে ২০ মিনিটের মতো গুলির লড়াই চলে। তারপর জঙ্গিরা পালানোর চেষ্টা করে। তাদের ধাওয়া করেন জওয়ানরা। রাত ন'টা নাগাদ ফের গুলির লড়াই শুরু হয়। গুলির লড়াইয়ে ক্যাপ্টেন ব্রিজেশ-সহ ভারতীয় সেনার চার জওয়ান গুরুতর আহত হন। পরে চারজনের মৃত্যু হয়। ক্যাপ্টেন ব্রিজেশ ছাড়াও নায়েক ডি রাজেশ, সিপাহি বিজেন্দ্র এবং সিপাহি অজয় শহিদ হয়েছেন।
কষ্ট বুকে নিয়েও গর্বিত বাবা
ক্যাপ্টেন ব্রিজেশের মৃত্যুর খবর পৌঁছাতেই দার্জিলিঙের বাড়িটা পুরোপুরি নিস্তব্ধ হয়ে যায়। প্রতিবেশীরাও কী বলবেন, কিছু বুঝতে পারছিলেন না। তারইমধ্যে ক্যাপ্টেন ব্রিজেশের বাবা জানান, ছোট থেকেই ভারতীয় সেনায় যোগ দিতে চাইতেন ছেলে। সেরকমভাবেই প্রস্তুতি নিতেন। দার্জিলিঙে প্রাথমিক পড়াশোনা করে মুম্বইয়ের ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কলেজ থেকে বিটেক করেছিলেন। ২০১৮ সালে কম্বাইন্ড ডিফেন্স সার্ভিস পরীক্ষা দিয়েছিলেন। ২০১৯ সালে সেনায় যোগ দিয়েছিলেন তিনি।
কেঁদে ফেললেন জেঠু
সেই ছেলের মৃত্যুর খবর পৌঁছাতে চোখের জল সামলাতে পারেননি ব্রিজেশের জেঠু যোগেশ। সংবাদসংস্থা এএনআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিনি বলেছেন যে 'দেশের জন্য ও জীবন উৎসর্গ করে দিয়েছে, সেটা বলা সহজ। কিন্তু আমাদের পরিবারের যে ক্ষতি হল, সেটা তো কোনওদিন পূরণ হবে না। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে সরকারকে। প্রতিদিন আমাদের জওয়ানরা শহিদ হচ্ছেন।'