ইদানীংকালে একের পর এক বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। যা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে রাজ্যের সরকার, পুলিশ ও প্রশাসনকে। তাই, বাজি কারখানাগুলির উপর যাতে নিয়ন্ত্রণ রাখা যায়, সেই বিষয়ে আগেও পদক্ষেপ করেছে রাজ্য প্রশাসন। বিশেষ করে বেআইনি বাজি কারখানা নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে সতর্ক থাকার বার্তা দেওয়া হয়েছে।
এত কিছুর পরও ফের একবার বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটল। এবং এখনও পর্যন্ত যে খবর সামনে এসেছে, তাতে অভিযোগ উঠছে, ভয়াবহ বিস্ফোরণে কল্যাণীর রথতলার যে বাজি কারখানাটি কার্যত গুঁড়িয়ে গিয়েছে, সেটিও বেআইনিই ছিল!
এই প্রেক্ষাপটে গোটা ঘটনায় যথেষ্ট উদ্বিগ্ন এবং ক্ষুব্ধ নবান্ন। সূত্রের দাবি, কীভাবে এই ঘটনা ঘটল, সেই বিষয়ে রিপোর্ট তলব করেছে রাজ্য প্রশাসনের সদর কার্যালয়। নবান্নের পক্ষ থেকে নদিয়া জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের কাছে সেই রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছেন রাজ্য পুলিশের ডিজি।
এর পাশাপাশি, এদিনের এই ঘটনার প্রেক্ষিতে রাজ্যের জেলাশাসকদের একটি বিশেষ নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। তাঁদের সকলকে নিজের নিজের এলাকার একটি তালিকা প্রস্তুত করতে বলা হয়েছে। জেলার কোথায় কোথায় বাজি তৈরি করা হচ্ছে, সেই বাজি কোথায় মজুত করে রাখা হচ্ছে এবং তা কোথায় বিক্রি করা হচ্ছে - এই সমস্ত তথ্য সংশ্লিষ্ট তালিকার মাধ্যমে তাঁদের নথিভুক্ত করতে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে, কল্যাণীর ঘটনায় এখনও পর্যন্ত অন্তত চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। নিহতদের মধ্যে দু'জন মহিলাও রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। নবান্নের নির্দেশ, এই ঘটনায় মোট কতজনের মৃত্যু হয়েছে, কতজন আহত হয়েছেন, সেই সমস্ত তথ্য জেলার পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাজ্য সরকারকে জানাতে হবে।
একইসঙ্গে, কীভাবে এই বিস্ফোরণ ঘটল, তারও ব্যাখ্য়া চাওয়া হয়েছে নবান্নের তরফে। তবে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিকভাবে এই ঘটনার জন্য শর্ট সার্কিটকেই দায়ী করা হচ্ছে।
মনে করা হচ্ছে, শর্ট সার্কিট থেকে প্রথমে আগুন লাগে। চারিদিকে দাহ্য পদার্থ থাকা তা ভয়াবহ আকার নেয় ও বিস্ফোরণ ঘটে। যদিও, আনুষ্ঠানিকভাবে এই বিষয়ে তত্ত্ব প্রকাশ করা হয়নি। দমকলের তরফে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। পুলিশও আলাদাভাবে সবকিছু খতিয়ে দেখছে বলে জানা গিয়েছে।
এদিকে, ঘিঞ্জি এলাকায় এবং ঘুপচি ঘরে কীভাবে বাজির কারখানা গড়ে উঠল, তা নিয়েও কাটাছেঁড়া শুরু হয়েছে। অভিযোগ উঠছে, বাজির কারখানা তৈরির জন্য যেসমস্ত নিয়ম মানা দরকার, তা এক্ষেত্রে অগ্রাহ্য করা হয়েছে।
নিয়ম বলছে, ১৫ কেজি পর্যন্ত বাজি এবং বাজির মশলা তৈরি করার জন্য যে লাইসেন্স প্রয়োজন হয়, সেটি প্রদান করেন জেলাশাসক। পণ্য় উৎপাদনের ক্ষমতা ১৫ থেকে ৫০০ কেজির মধ্য়ে হলে কন্ট্রোলার অব এক্সপ্লোসিভস-এর কাছ থেকে লাইসেন্স নিতে হয়।
কিন্তু, যদি তার থেকেও বেশি পরিমাণে বাজি উৎপাদন করতে চান কেউ, তাহলে তাঁকে চিফ কন্ট্রোলার-এর কাছ থেকে লাইসেন্স নিতে হয়। এছাড়াও, বাজি তৈরির একাধিক ধাপের জন্য আলাদা-আলাদা লাইসেন্স নিতে হয়। কল্য়াণীর কারখানাটির ক্ষেত্রে এই সমস্ত নিয়ম মানা হয়েছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।