সদ্য প্রয়াত হয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক নাসিরউদ্দিন আহমেদ (লাল)। এরপরই দেখা গেল ওই প্রয়াত বিধায়কের স্মরণসভা ঘিরে তৃণমূল কংগ্রেসের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। অবস্থা এমন হল যে এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে এল। আর এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের দুই মাথা হলেন, নদিয়ার কৃষ্ণনগরের তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ মহুয়া মৈত্র এবং বিধায়ক উজ্জ্বল বিশ্বাস। কারণ এই দু’জনই পৃথকভাবে দু’টি স্মরণসভা ডেকে বসেন। যা নিয়ে কর্মীদের মধ্যে বেড়ে যায় বিস্তর জটিলতা। সেই খবর পৌঁছে যায় রাজ্য নেতৃত্বের কাছে। আর তখন রাজ্য নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে উজ্জ্বল বিশ্বাসের ডাকা স্মরণসভা বাতিল হয়ে যায়। মহুয়া মৈত্রের ডাকা স্মরণসভাতেই সিলমোহর দেয় রাজ্য নেতৃত্ব বলে সূত্রের খবর।
এই ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসতেই বেকায়দায় পড়ে যান বিধায়ক উজ্জ্বল বিশ্বাস। এই নিয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করেননি। সরস্বতী পুজোর আগের দিন মৃত্যু হয় নদিয়ার কালীগঞ্জ বিধানসভার বিধায়ক নাসিরউদ্দিন আহমেদের। তাঁর মৃত্যুর পর নাসিরউদ্দিন ঘনিষ্ঠ বিধায়ক স্মরণসভার ডাক দেন। আজ, রবিবার সেই স্মরণসভা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটা থমকে গেল। এই স্মরণসভার নেতৃত্বে ছিলেন উজ্জ্বল বিশ্বাস। আবার দেখা গেল কৃষ্ণনগরের তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদও একই দিনে একটি স্মরণসভার ডাক দেন। সুতরাং জটিলতা তৈরি হয়। অবশেষে রাজ্য নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে জটিলতা কেটে গেলেও গায়ে লেগেছে বিধায়কের।
আরও পড়ুন: আবার চার বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী গ্রেফতার, নদিয়ার হাঁসখালি থানার অভিযানে পড়ল ধরা
সামনে বিধানসভা নির্বাচন। ২০২৬ সালে তা হবে বাংলায়। এখন থেকেই তার প্রস্তুতি নেওয়া চলছে। সেখানে আগ বাড়িয়ে উজ্জ্বল বিশ্বাসের উদ্যোগকে আটকে দেওয়া বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। উজ্জ্বল বিশ্বাসের সঙ্গে রাজ্য নেতৃত্ব যোগাযোগ করেছিল। তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হয়, তাঁর ডাকা স্মরণসভা তুলে নিতে হবে বলে সূত্রের খবর। তারপরই রবিবার মহুয়া মৈত্র নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে লেখেন, ‘রাজ্য কমিটির নামে ডাকা স্মরণসভার কোনও দলীয় অনুমোদন ছিল না। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে সেটি বাতিল করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই রবিবার ১৬ ফেব্রুয়ারি দুপুরে দলের পক্ষ থেকে স্মরণসভা ডাকা হয়েছে। সমস্ত নেতৃত্ব এবং কর্মীবৃন্দকে ১৬ তারিখের সভাতে উপস্থিত থাকার অনুরোধ করা হচ্ছে।’
এই সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট থেকে সবটা পরিষ্কার হয়ে যায়। মহুয়া মৈত্রকে নিয়ে দলের অন্দরে বিতর্ক থাকলেও তাঁর উপরেই ভরসা রাখা হয়েছে। কারণ তৃণমূল কংগ্রেসকে জাতীয় রাজনীতিতে বলিষ্ঠভাবে এগিয়ে নিয়ে যান মহুয়া মৈত্রই। তাছাড়া মহুয়া মৈত্রকে দলীয় সভাপতির পদ থেকে সরাতে একযোগে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে নালিশ জানিয়েছিলেন ছয় বিধায়ক। তার মধ্যে এই উজ্জ্বল বিশ্বাস রয়েছেন। এবার মহুয়া সুকৌশলে পাল্টা ধাক্কা দিলেন। সুতরাং নদিয়া জেলায় শাসকদলের অন্দরে এখন আড়াআড়িভাবে বিভক্ত হয়ে পড়ল।