জমি আন্দোলনের জেলা হিসাবে পরিচিত পূর্ব মেদিনীপুর। এখানের চাষের মাটি বাঁচাতেই জমি আন্দোলন করেন নন্দীগ্রামের বাসিন্দারা। তবে দেড় দশক আগের সেই আন্দোলনের কাহিনী যেন আজও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে। কারণ এই নন্দীগ্রামকে দেশের রেল মানচিত্রে জুড়তে মাটি এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানে ১৩ বছর আগে এই রেল প্রকল্পের ঘোষণা করেছিলেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে এখন তিনি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। আর এই রেল প্রকল্প নিয়ে এখন প্রবল উৎসাহ দেখে দিয়েছে অধিকারী পরিবারের। কারণ এখন তাঁরা বিজেপির সঙ্গে যুক্ত।
এদিকে রেল সূত্রে খবর, কাঁথির দেশপ্রাণ থেকে নন্দীগ্রাম পর্যন্ত বিরাট এলাকার জমি বেশ নিচু। তাই এই নীচু জমিতে রেল প্রকল্প করতে গেলে বড় চাপের মুখে পড়তে হচ্ছে। কারণ এই জমি ভরাট করার জন্য যে পরিমাণ মাটি দরকার সেটা এলাকার কোথাও থেকে মিলছে না। সুতরাং প্রায় ১০ কিলোমিটার দূর থেকে মাটি কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই বিষয়ে দক্ষিণ–পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার অনিলকুমার মিশ্র বলেন, ‘১৮.৫ কিমি দীর্ঘ রেললাইনের কাজ দ্বিতীয়বার শুরু হয়েছে। দু’টো বড় সেতুর কাজ চলছে। এসবের মধ্যে ভোগান্তি বেড়েছে নিচু জমি ভরাট করতে গিয়ে। ১৮ লক্ষ কিউবিক মিটার মাটির দরকার। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে না।’
আরও পড়ুন: আগামী সপ্তাহে প্রকাশিত হতে পারে বিজেপি প্রথম প্রার্থী তালিকা, চলছে সমীক্ষা
অন্যদিকে এই রেল প্রকল্প হলে বহু মানুষের উপকার হতো। তাই এটা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করেছে রেল মন্ত্রক। অন্য অনেক প্রকল্পে বরাদ্দ বন্ধ করে দিয়েছে রেল। কিন্তু এটা চালু করতে চাইছে। নন্দীগ্রামে যে জমি আন্দোলন করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাকে সম্মান দিতেই রেলমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি ঘোষণা করেছিলেন, দেশপ্রাণ–নন্দীগ্রাম রেল প্রকল্প করা হবে। ২০১০ সালে প্রকল্পের সূচনা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার জন্য ১২১ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। জমিদাতাদের পরিবারপিছু চাকরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেল মন্ত্রক থেকে সরতেই এই প্রকল্প অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে। সম্প্রতি তমলুকের সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী এবং নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী আবার ওই রেল প্রকল্প চালুর আবেদন জানান। তাই শুরু হয়েছে তৎপরতা।
এছাড়া এখন আর অনেকে জমি দিতে চাইছেন না। তাই জমিদাতারা রেলের কাজে বাধা এসেছে। তাঁদের চাকরি দিলে তবেই জমি সমস্যা মিটবে বলে জানানো হয়েছে। বহু পরিবার সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণ পাননি বলে অভিযোগ। তার মধ্যেই জুড়ে গিয়েছে মাটির সমস্যা। এখন দু’টি বড় রেলসেতু তৈরির কাজে মূল সমস্যা মাটি। এই বিষয়ে দক্ষিণ পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজারের বক্তব্য, ‘তিনজন ঠিকাদারের প্রত্যেকে ৫–৬ হাজার কিউবিক মিটার মাটি সরবরাহ করবেন। এই কাজ ৬ মাসের মধ্যে শেষ হতে পারে। তার পরে লাইন বসানো হবে।’