নিম্নচাপ অনেকদিন ধরেই তৈরি হচ্ছিল। গত কয়েকদিনে একটু শক্তি বেড়েছে বটে, কিন্তু পুরোমাত্রায় ঝড় শুরু হয়নি। তাতেই দিল্লিতে মুকুল রায়ের বাসভবন থেকে উড়ে গেল বিজেপির পোস্টার, প্ল্যাকার্ড। মাঝারি মাত্রার ‘ঝড়’-এ রেহাই পেল না নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহদেরও ছবি।
মুকুল অনুগামীদের বক্তব্য, দলের মধ্যে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং রাজ্য সম্পাদক সুব্রত চট্টোপাধ্যায়ের ছড়ি ঘোরানোর কারণে ‘দাদা’ কোণঠাসা হচ্ছিলেন। সেই অবস্থায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব চেয়েছিলেন মুকুল। কিংবা একুশের ভোটকে পাখির চোখ করে রাজ্য় বিজেপির গুরুত্বপূর্ণ পদের দাবি জানিয়েছিলেন তিনি। তাহলে নিজের মতো করে ঘুঁটি সাজাতে পারতেন। নিজের সাংগঠনিক দক্ষতাকে কাজে লাগানোই ছিল মুকুলের উদ্দেশ্য। কিন্তু নিজের পছন্দমতো পদ পাচ্ছিলেন না বলে অনুযোগ মুকুল অনুগামীদের।
বিজেপির অন্দরের খবর, শুধু মেরুকরণের উপর ভর না করে সংখ্যালঘুদের মন জয়ের জন্য পূর্ণশক্তিতে ঝাঁপানোর বার্তাও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে দিয়েছিলেন মুকুল। কেন্দ্রীয় স্তরের নেতাদের শীর্ষ নেতাদের সবুজ সংকেত পেলেই তৃণমূলের ঘর ভাঙিয়ে আরও কয়েকজন নামভারী সংখ্যালঘু নেতাকে দলে টানার পরিকল্পনাও সেরে রেখেছিলেন। কিন্তু তাতে কেন্দ্রীয় নেতাদের তরফে ইতিবাচক কোনও সাড়া মেলেনি। তারইমধ্যে দিলীপের সঙ্গে মুকুলের 'তিক্ততা' এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে বৈঠকের মাঝপথেই কলকাতায় ‘চোখের চিকিৎসা’-র জন্য ফিরে এলেন মুকুল।
কিন্তু গত লোকসভা ভোটে যে মুকুলের হাত ধরে বিজেপির শক্তি অনেকটাই বাড়ল, তাঁর কি দলে গুরুত্ব কমছে? তা নিয়ে দিলীপ অবশ্য কিছুটা ঘুরিয়ে জানান, দল হিসেবে বিজেপির গুরুত্ব সর্বাধিক। কোনও ব্যক্তিবিশেষের গুরুত্ব বেশি নয়। প্রয়োজনমতো দলের নেতাদের ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ ইঙ্গিতেই বুঝিয়ে দিয়েছেন মুকুলের রাজনীতি ভবিষ্যৎ কী হতে চলেছে।
বিজেপির অন্দরে একটি অংশ দিলীপের সমর্থনে আছে। সেই নেতাদের বক্তব্য, মুকুল এমনিতেই যথেষ্ট পেয়েছেন। এর থেকে বেশি দেওয়া ঠিক হবে না। কিন্তু অপর একটি অংশ আবার দলের মধ্যে মুকুলকে কোণঠাসা করে রাখার পক্ষপাতী নয়। সেই দলে রয়েছেন রাজ্য বিজেপির কয়েকজন সাধারণ সম্পাদক, এক সাংসদ এবং নরেন্দ্র মোদীর কাছের হিসেবে পরিচিত এক বাঙালি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও। ওই গোষ্ঠীর বক্তব্য, বিধানসভা ভোটে মুকুলের দক্ষতাকে কাজে লাগালে আখেরে বিজেপিরই লাভ হবে। মুকুলের হয়ে অমিত শাহ, জে পি নাড্ডার কাছে তাঁরা দরবারও করছেন ওই নেতারা। কিন্তু এখনও কোনও ইতিবাচক খবর পাননি। তাই মুকুলের সঙ্গে কথা বলে তাঁকে আর একটু ধৈর্যও ধরতে বলেছেন।
কিন্তু মুকুল অনুগামীদের প্রশ্ন, কতদিন আর ধৈর্য ধরবেন ‘দাদা’? আড়াই বছর তো হয়ে গেল বিজেপিতে। লোকসভা ভোটেও বিজেপির খুঁটি জোর করলেন। তারপরও কি কোণঠাসা হয়ে থাকাটা মেনে নেওয়া যায়?
তবে কি বিজেপি সঙ্গ ত্যাগ করবেন মুকুল ? তৃণমূলের সঙ্গেও তো সমান্তরাল যোগাযোগ রেখেছেন বলে শোনা যাচ্ছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, নিজের ইচ্ছায় দলত্যাগ করে অন্য দলে নাম লেখাতে পারবেন না মুকুল। কারণ তাঁরা মাথার উপর ঝুলছে সিবিআইয়ের খাঁড়া। বেগড়বাই করলেই কী হবে, তা জানা আছে বলে মত রাজনৈতিক মহলের।