ঠাকুরনগরের মতুয়া ঠাকুরবাড়ির মতোই এবার কি ফুরফুরা শরিফের পীরজাদাদের পরিবারেও ভাঙন ধরাবে রাজনীতি? মানতে নারাজ এই পরিবারের অন্যতম সদস্য তথা ভাঙড়ের বিধায়ক ও আইএসএফ নেতা মহম্মদ নওশাদ সিদ্দিকী। আজ (মঙ্গলবার - ১০ জুন, ২০২৫) এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, 'পরিবারের মধ্যে কেউ ভাঙন ধরাতে পারবে না। আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক খুবই ভালো।'
কিন্তু, হঠাৎ এসব নিয়ে প্রশ্ন উঠছে কেন? কারণ, ফুরফুরা শরিফের পীরজাদাদের মধ্যে অন্যতম কাশেম সিদ্দিকী তৃণমূল কংগ্রেসের যোগ দেওয়ার পর ইতিমধ্যেই তাঁকে দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক পদে বসানো হয়েছে।
সূত্রের দাবি, এই ঘটনার নেপথ্যে নাকি রয়েছে ভোটের রাজনীতি! বছর ঘুরলেই বাংলায় বিধানসভা নির্বাচন। তথ্যাভিজ্ঞ মহলের একাংশ মনে করছে, আগামী নির্বাচনে ফের যদি ভাঙড় থেকে প্রার্থী হন নওশাদ, তাহলে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে কাশেমকে দাঁড় করাতে পারে ঘাসফুল শিবির। সেই কারণেই তাঁকে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ভালো মতো চর্চা শুরু হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এ নিয়ে নওশাদকে প্রশ্ন করা হয়। এক্ষেত্রে রাজনীতি আর পরিবার যে ভিন্ন মেরুতে অবস্থান করছে, কার্যত সেই বার্তাই দিয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে জানিয়েছেন, কাশেমের তৃণমূলে যাওয়াটা নাকি সাধারণ মানুষ ভালোভাবে নিচ্ছে না। এমনকী, তাঁর পদলাভে নাকি তৃণমূলের অন্দরেই অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
এই প্রসঙ্গে নওশাদ বলেন, 'রাজনীতির সূত্রে অনেকের সঙ্গেই সৌজন্যের সম্পর্ক আছে। কাল থেকে অনেকে আমাকে ফোন করে বলছেন, আমরা এতদিন ধরে রাজনীতিতে আছি, কাশেম হঠাৎ এসে পদে বসে গেলেন কী করে?' এই প্রসঙ্গে শওকত মোল্লার নামও টেনে আনেন এই তরুণ রাজনীতিক। কটাক্ষের সুরে বলেন, 'বিধায়ক শওকত মোল্লা প্রতিনিয়ত আমাকে হেনস্থা করে চলেছেন। তারপরও পদ পেলেন না। রাজ্য সাধারণ সম্পাদক পদে কখন কাকে বসিয়ে দেয়, বোঝা মুশকিল!'
আগামী বিধানসভা নির্বাচনে কাশেমের সঙ্গে তাঁর সম্ভাব্য 'সম্মুখ সমর' নিয়ে প্রশ্ন করা হলে নওশাদের গলায় আবারও কটাক্ষ শোনা যায়। তিনি বলেন, 'আমি তো চাই আমার বিরুদ্ধে আর কেউ নন, মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী হোন!'
প্রসঙ্গত, এর আগে বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রে ঠাকুরনগরের ঠাকুরবাড়ির দুই সদস্য মমতাবালা ঠাকুর (তৃণমূল কংগ্রেস) ও শান্তনু ঠাকুর (বিজেপি) পরস্পরের বিরুদ্ধে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন। তাঁদের এই রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ধর্মীয় নেতৃত্বলাভ ও পারিবারিক কর্তৃত্ব আদায়ের লড়াইয়েও দেখা গিয়েছে। আগামী দিনে ফুরফুরা শরিফের পীরজাদাদের পরিবারেও একই পরিস্থিতি তৈরি হয় কিনা, সেটাই দেখার।