তিনি পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় তিনবার সাগর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। এই প্রথম স্বাধীনতার পর সাগর বিধানসভার কোনও বিধায়ক স্থান পেয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রিসভাতে। আর সম্ভব হয়ে উঠেছে বাংলার নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য। ফলে মন্ত্রী হলেন বঙ্কিমচন্দ্র হাজরা৷ রাজ্যে তৃতীয়বার ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল কংগ্রেস সরকার। কিন্তু শুরুতেই তাঁর কাঁধে পড়েছে গুরুদায়িত্ব। আর তা হল ‘ইয়াস’ ঘূর্ণিঝড় থেকে মানুষকে রক্ষা করা।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা সাগর বিধানসভা কেন্দ্রের টানা তিনবারের বিধায়ক বঙ্কিমচন্দ্র হাজরা হয়েছেন রাজ্যের সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী। আমফান তিনি দেখেছেন। অভিজ্ঞতা এতটুকুই। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে দায়িত্ব দিয়েছেন এই দুর্যোগ মোকাবিলা করার জন্য। মানুষের বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য। ঘূর্ণিঝড় ইয়াস আগামী ২৫–২৬ তারিখের মধ্যে সুন্দরবনের ওপর ধেঁয়ে আসছে। তারই জন্য সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রীর বঙ্কিমচন্দ্র হাজরার নির্দেশে ইরিগেশান ডিপারমেন্টের উদ্যোগে সাগরের বিভিন্ন জায়গায় যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চলছে নদীবাঁধ মেরামতের কাজ। এই দৃশ্য ধরা পড়ল দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার গঙ্গাসাগরের কচুবেড়িয়া গ্রামে সেখানে মানুষ ও জেসিবি দিয়ে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চলছে নদী বাঁধ মেরামতির কাজ।
এই বিষয়ে বঙ্কিমচন্দ্র হাজরা বলেন, ‘দায়িত্ব পাওয়ার পর কাজ অনেক বেড়ে গিয়েছে। গত ১০ বছরে যে পরিমাণ উন্নয়ন হয়েছে, সেই উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে হবে৷ নদী বাঁধগুলি মেরামতি করা আমার এখন প্রধান কাজ। এটা মানুষের সরকার। তাই বিপদে–আপদে মানুষের পাশে থাকতে হবে।’ ২০২০ সালে আয়লা এবং আমফানের মতো বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে এক লহমায় লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল গাঙ্গেয় উপকূলবর্তী অঞ্চল। সুন্দরবনের সেই ক্ষত মিটতে না মিটতে ফের নয়া আতঙ্ক ‘ইয়াস’। উদ্ভূত বিপর্যয়ের মোকাবিলা করাটাই প্রশাসনের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। চ্যালেঞ্জ বঙ্কিমচন্দ্র হাজরার কাছেও।
এই বিষয়ে একটি সরকারি চিঠি হাতে আসে বঙ্কিমবাবুর। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ মতো দুই ২৪ পরগনার জেলাশাসকদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন তিনি। প্রশাসনের পাশাপাশি পুলিশ, জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি, সেচ, বিপর্যয় মোকাবিলা–সহ বিভিন্ন জরুরি বিভাগের আধিকারিকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমেও চলে বৈঠক। এমনকী মহকুমা স্তরেও চলছে ম্যারাথন বৈঠক। আসলে মুখ্যমন্ত্রীর চিঠি তাই এটা তাঁর কাছে বাড়তি চ্যালেঞ্জ।
ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয় কেন্দ্র এবং ফ্লাড সেন্টারগুলি ছাড়াও এবার সুন্দরবনের প্রত্যেক মহকুমায় শতাধিক স্কুল এবং আইসিডিএস সেন্টারগুলিতে উপকূলের মানুষদের নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। নাওয়া-খাওয়া ভুলে সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় চষে বেড়াচ্ছেন মন্ত্রী বঙ্কিমচন্দ্র হাজরা। আসলে এই অগ্নিপরীক্ষায় পাশ করতেই হবে। এই কথা স্বীকার করে নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘ঝড়ের মোকাবিলা করতেই প্রশাসনের সাহায্যে সুন্দরবন জুড়ে সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়ে রাখা হয়েছে। তবে করোনার ভয়ঙ্কর সংক্রমণের মাঝেই ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়লে পরিস্থিতির মোকাবিলা করা রীতিমত চ্যালেঞ্জ।’
উল্লেখ্য, সুন্দরবন উন্নয়ন বোর্ড এবং গঙ্গাসাগর–বকখালি উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকাকালীন অনেকগুলিই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে সামনে থেকে কাজ করেছেন তিনি। সাগরের বিধায়ক হিসেবে বুলবুল ও আমফান ঘূর্ণিঝড়ের সময়েও বিপর্যয় মোকাবিলায় কাজ করেছেন তিনি। এবার তিনি মন্ত্রী। তাই বাড়তি দায়িত্ব তাঁর। ঘূর্ণিঝড়ের নাম ‘ইয়াস’। এবার তাঁর প্রাপ্ত ভোট সংখ্যা–১২৯০০০। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক থেকে মন্ত্রী। বয়স ৬৬। এখন দেখার এই বয়সে ঘূর্ণিঝড়কে তিনি কেমন ভেলকি দেখান।