বিয়ের সানাইয়ের সুর মেলাতে না মেলাতেই উঠল বুকফাটা কান্নার রোল! বিয়ের তিনদিনের মাথায় উদ্ধার হল নতুন বরের ঝুলন্ত দেহ! কোচবিহারের এই ঘটনায় শোকস্তব্ধ নববধূ। কীভাবে কী ঘটল, বুঝে উঠতে পারছেন না বর ও বউয়ের পরিবারের সদস্যরাও। হতবাক পাড়া-পড়শিরাও।
ঘটনা প্রসঙ্গে জানা গিয়েছে, রবিবার সকালে যে যুবকের দেহ উদ্ধার হয়েছে, তাঁর নাম দীপঙ্কর বর্মন, বয়স ৩২ বছর। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, তিনি আত্মঘাতী হয়েছেন। কিন্তু, কেন তিনি এমনটা করবেন, সেটাই কারও বোধগম্য হচ্ছে না।
দীপঙ্করের বাড়ি কোচবিহারের তুফানগঞ্জের মারুগঞ্জ উত্তর মরাডাঙা এলাকায়। গত বৃহস্পতিবার তাঁর সঙ্গে বিয়ে হয় নিউ কোচবিহারের বাসিন্দা শিবাণীর। সম্বন্ধ করে বিয়ে হয়েছিল তাঁদের।
দুই পরিবারের দাবি, সম্বন্ধ দেখা থেকে বিয়ে - কোথাও কোনও সমস্যা সামনে আসেনি। এমনকী, যেহেতু শিবাণীর পরিবার অত্যন্ত নিম্নবিত্ত, তাই বিয়ের আসরও বসেছিল পাত্রপক্ষের বাড়িতে। যা সচরাচর ঘটে না। সাধ্য মতো ধুমধাম করেই দীপঙ্কর ও শিবাণীর বিয়ে দিয়েছিল বর্মন পরিবার।
রবিবার নতুন বউকে সঙ্গে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার কথা ছিল বরের। তার জন্য আগে থেকে গাড়ি পর্যন্ত 'বুক' করে রাখা হয়েছিল। অথচ, এদিন সকালেই দীপঙ্করের মা দেখেন, বাড়ির পিছনের একটি গাছে তাঁর সদ্য বিবাহিত ছেলের নিথর দেহ ঝুলছে! এই ঘটনায় বাক্যহারা হয়ে যান তিনি।
পরবর্তীতে স্থানীয় থানায় খবর দেওয়া হয়। পুলিশ এসে গাছ থেকে দেহটি নামানোর ব্যবস্থা করে। পরে ময়নাতদন্তের জন্য দীপঙ্করের দেহ পাঠানো হয়।
এই ঘটনা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না দীপঙ্করের ভাই। তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, শনিবার রাতেও দাদার সঙ্গে তাঁর গল্প, আড্ডা হয়েছে। পরে রাত বাড়লে দাদা তাঁর ঘরে চলে যান। সঙ্গে তখন তাঁর নতুন বউ। তারপর কী এমন হল যে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দাদার দেহ উদ্ধার হল? এই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছেন দীপঙ্করের ভাই।
একই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে পুলিশও। তাদের প্রাথমিক তদন্ত এবং স্থানীয় সূত্র মারফত উঠে আসা খবর থেকে জানা গিয়েছে, দীপঙ্করকে এলাকার সকলেই পছন্দ করতেন। তাঁর ঠান্ডা মেজাজ ও হাসিখুশি স্বভাবের জন্য সকলে তাঁকে ভালোবাসতেন। এমনকী, তাঁর কখনও কোনও প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলেও জানা যায়নি। প্রশ্ন হল, তাহলে হলটা কী?
এদিকে, নতুন জামাইয়ের এই পরিণতি শুনে শিবাণীর পরিবারের সদস্যরাও হতবাক হয়ে গিয়েছেন বলে দাবি করা হচ্ছে। তাঁদেরও বক্তব্য হল, কেন এবং কীভাবে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটল, তা তাঁরা বুঝে উঠতে পারছেন না।
পুলিশ ইতিমধ্যেই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। সবদিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অন্যদিকে, রবিবারও বর্মনদের বাড়িতে বিয়ে, বউভাতের প্যান্ডেল খোলা হয়নি। তার আগেই সারা বাড়িতে যেন চেপে বসেছে শ্মশানের নিস্তব্ধতা!