মহম্মদবাজারে বিস্ফোরক পাচারের ঘটনা ঘটেছিল। আর বেলডাঙায় বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল। এই দুই ঘটনার এবার তদন্তভার হাতে নিল এনআইএ (ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেটিং এজেন্সি)। এতদিন রাজ্য পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ) এই তদন্ত চালাচ্ছিল। এনআইএ বিস্ফোরক উদ্ধারের প্রাথমিক তদন্তের সংক্ষিপ্ত রিপোর্ট স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে জমা করে। আর বিস্ফোরকের পরিমাণের নেপথ্যে বড় কোনও জঙ্গি সংগঠনের নাশকতার ছক থাকতে পারে ভেবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এনআইএ তদন্তের নির্দেশ দেন। ইতিমধ্যেই নয়াদিল্লিতে এনআইএ এফআইআর জমা করেছে। (আরসি-৪৩/২০২২/এনআইএ/ডিএলআই)। বিস্ফোরক সরবরাহকারী মুক্তার খান এসটিএফের জালে ধরা পড়েছে। বোলপুরের এক প্রভাবশালী নেতার দেহরক্ষীর সঙ্গে মুক্তারের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল বলে তদন্তে উঠে এসেছে।
বিষয়টি ঠিক কী ঘটেছিল? গত ৩০ জুন মহম্মদবাজারে হানা দিয়ে ৮১ হাজার ডিটোনেটর উদ্ধার করে এসটিএফ। বিস্ফোরক বোঝাই গাড়ির চালক আশিস কেওড়াকে গ্রেফতার করা হয়। এসটিএফ বীরভূমের একাধিক জায়গায় তল্লাশি চালায়। নলহাটি থেকে রিন্টু শেখের এক গোডাউন থেকেও বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার করেন তাঁরা। বিস্ফোরক পাচারের ঘটনায় ধৃত আশিস কেওড়ার সূত্র ধরেই মুক্তার খানের নাম জানতে পারেন অফিসাররা। মুক্তার খানকে বিহার থেকে গ্রেফতার করা হয়। আশিস গ্রেফতার হতেই মুক্তার গা–ঢাকা দিয়েছিল। মুক্তারের বাড়ি ঝাড়খণ্ডের বোধগ্রাম থেকে ১০ কিমি ভিতরে। তার ঝাড়খণ্ডে একটি লাইসেন্সপ্রাপ্ত অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট প্রস্তুতকারী কারখানা ছিল। আর নলহাটির বিস্ফোরক মজুত কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত রিন্টু শেখও প্রতি মাসে মুক্তারের থেকে বিপুল পরিমাণ অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট কিনত বলে এসটিএফ জানতে পারে। এই কজে বোলপুরের এক প্রভাবশালীর নেতার দেহরক্ষী বিস্ফোরক পাচারে সাহায্য করত বলে তথ্য পায় এসটিএফ।
আর কী জানা যাচ্ছে? মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় বোমা বিস্ফোরণের তদন্তভারও হাতে নিয়েছে এনআইএ। গত ১৭ জানুয়ারি রাতে বেলডাঙা থানার রামেশ্বরপুর এলাকায় বোমা বাঁধতে গিয়ে বিস্ফোরণে একজনের মৃত্যু হয়েছিল। এমনকী বিস্ফোরণের জেরে বাগানের ভিতর একটি ঘরের ছাদ উড়ে যায়। সেখানে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ ওই ভাঙা ঘর থেকে ৭৫টি সকেট বোমা এবং বোমা তৈরির প্রচুর সরঞ্জাম উদ্ধার করে। এই ঘটনায় জেলা পুলিশ তদন্ত করে পাঁচ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে।
আর এখন ঠিক কী হল? এই ঘটনার আটমাস পর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নির্দেশে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এই মামলার তদন্ত শুরু করছে। নয়াদিল্লিতে একটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে এনআইএ’র পক্ষ থেকে। সূত্রের খবর, বিস্ফোরণ কাণ্ডের পর এনআইএ এই ঘটনার তথ্য জোগাড় করতে থাকে। সেই তথ্য নিয়ে একটি রিপোর্ট তৈরি করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে পাঠায় তাঁরা। আর তারপরই এনআইএ–কে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে নির্দেশ দেয় অমিত শাহের মন্ত্রক। নির্দেশ পাওয়ার পরই তদন্ত শুরু করছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা।