স্বাস্থ্য–ব্যবস্থায় নয়া চমক। তবে এটা সরকারিভাবে কেউ ঠিক করে দেয়নি। নিজের ইচ্ছাকেই বাস্তবে পরিণত করা হয়েছে এখানে। হাসপাতাল সুপার যখন ছুটিতে তখন তাঁর কোয়ার্টার্সে চিকিৎসক সেজে রীতিমতো রমরমিয়ে কারবার করলেন হাসপাতালের নৈশপ্রহরী! শুনতে অবাক লাগলেও আজ এটাই বাস্তব। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ল গাজোল গ্রামীণ হাসপাতাল চত্বরে। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে এখন গা ঢাকা দিয়েছে ওই নৈশপ্রহরী।
ঠিক কী ঘটেছে? হাসপাতাল সূত্রে খবর, গ্রামীণ হাসপাতালে ওই নৈশপ্রহরী চিকিৎসক সেজে রোগী দেখছিল। আর তাকে সহযোগিতা করেছিল সুপারের কোয়ার্টার্সের কেয়ারটেকার। এই অভিযোগ প্রকাশ্যে আসতেই হাসপাতাল জুড়ে ধুন্ধুমার কাণ্ড বেঁধে যায়। এমনটা হতে পারে কেউ বিশ্বাসই করতে পারছেন না।
এই ঘটনায় গাজোল গ্রামীণ হাসপাতালে রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান রঞ্জিত বিশ্বাস বলেন, ‘বিষয়টি মারাত্মক। কয়েকদিনের মধ্যে কমিটির সভা ডেকে এই বিষয় নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’ এই ঘটনার কথা এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে।
কিভাবে প্রকাশ্যে এল ঘটনাটি? চিকিৎসার জন্য গাজোল গ্রামীণ হাসপাতালে আসেন পিঙ্কি ভুঁইমালি নামে এক মহিলা। এর আগে হাসপাতালের চিকিৎসক ডাক্তার বৃন্দাবন রায় এবং ডাক্তার শ্যামসুন্দর হালদারের চিকিৎসায় সুস্থ হয়েছিলেন তিনি। সম্প্রতি আবার অসুস্থ হওয়ায় চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আসেন। হাসপাতাল তাঁকে ডাঃ অঞ্জন রায়ের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন। তখন তিনি হাসপাতাল সুপার ডাক্তার অঞ্জন রায়ের কোয়ার্টার্সে যান। অভিযোগ, সেখানে তখন ডাক্তার সেজে রোগী দেখছিল ওই নৈশপ্রহরী। তাকে সহযোগিতা করছিল কেয়ারটেকার। ডাক্তার ভেবেই তার কাছে যান ওই মহিলা। পিঙ্কি দেবী বলেন, ‘একজন আর একজনকে বলে ওকে দেখে একটা প্রেসক্রিপশন করে দে। ওদের একজন রোগের বর্ণনা শুনে প্রেসক্রিপশন করে দিয়ে বলে বাইরের দোকান থেকে ওষুধ কিনে নিতে। চিকিৎসককে তুই তোকারি করছে আর হাসপাতাল থেকে না নিয়ে ওষুধ কিনতে বলছে বাইরে থেকে। এতেই সন্দেহ বাড়ে।’
তারপর প্রেসক্রিপশন নিয়ে সোজা হাসপাতালের আউটডোরে যান তিনি। প্রেসক্রিপশন দেখে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকদের চক্ষু চড়কগাছ। এভাবেই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই সুপারের কোয়ার্টার্স ছেড়ে চম্পট দেয় ভুয়ো চিকিৎসক।
সূত্রের খবর, রোগী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে চুক্তিভিত্তিতে ওই যুবককে নৈশপ্রহরী হিসেবে নিয়োগ করা হয়। সুপার তাকে নিয়ে আসেন হাসপাতালের ফার্মেসিতে। এখানেই বিভিন্ন ওষুধ এবং তার কার্যকারিতা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে সে। আর তারপর থেকেই সুপারের অনুপস্থিতিতে তাঁর কোয়ার্টার্সে চিকিৎসক সেজে রোগী দেখে গিয়েছে।
এদিনের বিষয়টি পিঙ্কি দেবী ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান। গাজোল থানাতেও মৌখিকভাবে বিষয়টি জানিয়েছেন তিনি। কীভাবে সুপারের অজান্তে তাঁরই কোয়ার্টার্সে এমন কারবার চলছে? তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।