ভারত কি হিন্দু রাষ্ট্র? এই প্রশ্ন এখন অনেক বেশি করে ঘোরাফেরা করছে দেশে। কারণ লোকসভা নির্বাচনের সময় বিজেপি নেতাদের মুখে তেমনই কথা শোনা গিয়েছিল। তবে লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের পরে সে কথা আর প্রকাশ্যে বলছেন না বিজেপি নেতা মন্ত্রীরা। এই দেশ বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যতে বিশ্বাসী। দেশের সংবিধান, আইন সে কথাই বলে থাকে। এবার গোটা বিষয়টি নিয়ে নিজের মতপ্রকাশ করলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। ভারত যে হিন্দু রাষ্ট্র নয় সেটা লোকসভা নির্বাচনের রায়ে প্রতিফলিত হয়েছে। তবে এবারের লোকসভা নির্বাচনের রায়ে ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র করার প্রচেষ্টা কিছুটা আটকানো গিয়েছে বলে দাবি করেন অমর্ত্য সেন।
কিছুটা আটকানো গেলেও এখনও পুরোপুরি আটকানো যায়নি। এটাই দেশের মানুষকে বোঝাতে চেয়েছেন অমর্ত্য সেন। নির্বাচনের ফলেই কি ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র করা থেকে আটকানো গেল? এই প্রশ্ন সাংবাদিকরা করেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদকে। জবাবে অমর্ত্য সেন বলেন, ‘এখন সর্বত্র আলোচনার বিষয়বস্তু ভারতকে কি করে হিন্দু রাষ্ট্র করা যায়? তবে স্কুলের কচিকাঁচা পড়ুয়াদের কাছে হিন্দু–মুসলিমের কোনও পার্থক্য নেই। তাই দেশে লোকসভা নির্বাচনে ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্র করার প্রচেষ্টা থেকে আটকানো গেল। তবে পুরোপুরি আটকানো গিয়েছে আমি বলতে পারব না।’
আরও পড়ুন: রথযাত্রার জেরে শহরবাসীকে কতটা যানজটে পড়তে হবে? রইল কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক আপডেট
এদিন প্রতীচী ট্রাস্টের পক্ষ থেকে আলোচনাচক্রের আয়োজন করা হয়। সেই আলোচনা চক্রের বিষয় ছিল, ‘কেন স্কুলে যাই: সহযোগিতার সহজ পাঠ’। শনিবার বোলপুরে জামবুনির এক বেসরকারি ভবনে এই শীর্ষক আলোচনা হয়। এখানে বিশিষ্ট বক্তা এবং শ্রোতা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ। প্রতীচী ট্রাস্টের মানবী মজুমদার, সৌমিক মুখোপাধ্যায়–সহ বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এই আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। আলোচনাসভায় অমর্ত্য সেনের বক্তব্যে উঠে আসে, ‘এখন সব জায়গায় আলোচনার বিষয় হল, ভারতকে কি করে হিন্দু রাষ্ট্র করা যায়? আর স্কুলের কচিকাঁচা পড়ুয়াদের কাছে হিন্দু–মুসলিমের কোনও পার্থক্য নেই। তাই দেশে লোকসভা নির্বাচনে ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্র করার প্রচেষ্টা থেকে আটকানো গেল। পুরোপুরি আটকানো গিয়েছে আমি বলতে পারব না।’
হিন্দুত্ব থেকে হিন্দুরাষ্ট্রের কথা বারবার শোনা গিয়েছে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে শুরু করে বিজেপির একাধিক নেতা–মন্ত্রীদের মুখে। কিন্তু তাতে লোকসভা নির্বাচনে প্রভাব ফেলেনি। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের বক্তব্য, ‘এবারের লোকসভা নির্বাচনে ভারতবর্ষকে হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করার প্রচেষ্টা দেখানো হয়েছে। কিন্তু ভারতবর্ষ যে হিন্দু রাষ্ট্র নয়, সেটারই প্রতিফলন ঘটেছে নির্বাচনে। কিন্তু যতটা আটকানো গিয়েছে সেটা দেখা গিয়েছে লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলে। যেখানে বড় মন্দির তৈরি হল, সেখানে একজন ধর্মনিরপেক্ষ দলের প্রার্থী, হিন্দুরাষ্ট্র গড়ার দাবি তোলা প্রার্থীকে হারিয়ে দিয়েছেন। ধর্মের নামে ভারতে এখন বিভাজন বাড়ছে। এখন দেশে দরকার মানবাধিকার শিক্ষার। একটা সংবিধান বদলাতে গেলে যে পরিমাণ আলোচনা দরকার, তার প্রমাণ চোখে পড়েনি।’