বয়স তো তাঁরও হয়েছে। কিন্তু তা বলে মানবিকতা কমে যায়নি। নিজের শরীরও অশক্ত। তার মধ্যেও তিনি দেখিয়ে দিলেন অতীতকে ভোলেননি। মানবিকতা এতটুকু হারায়নি তাঁর মধ্যে। তাই তো নিজের অশক্ত শরীর নিয়েও ছুটে গেলেন দুই কর্মীকে দেখতে। যাঁরা একসময় শান্তিনিকেতনে অমর্ত্য সেনের বাড়ি ‘প্রতীচী’র দেখাশোনা করেছেন। এই দায়িত্ব সামলেছেন অরবিন্দ নন্দী। এখন তিনি অসুস্থ। মঙ্গলবার বোলপুরের জামবুনির চারুপল্লিতে তাই অরবিন্দ নন্দীর সঙ্গে দেখা করতে গেলেন অমর্ত্য সেন। প্রতীচীতে একদা কাজ করতেন মাকু মুর্মুও। তাঁর কোমর ভেঙে যাওয়ায় বাড়িতে শয্যাশায়ী। তাঁর বাড়িতেও যান নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ। আর যান একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে। সেখানে তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। অমর্ত্য সেনের সঙ্গে ছিলেন তাঁর মেয়ে ইন্দ্রাণী সেন। তিনিও দেখলেন সবটাই।
একদা তাঁর জমি নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছিল। তখন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী আক্রমণ করেছিলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদকে। ওই সময়ে অমর্ত্য সেনের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তখন তাঁকেও আক্রমণ করেন প্রাক্তন উপাচার্য। কিন্তু সেদিন অমর্ত্য সেনের পাশে এসে দাঁড়িয়ে জমির নথি দিয়ে গিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর বলেছিলেন, এমন একজন মানুষকে যেন কেউ বিরক্ত না করেন। সেটা প্রশাসন দেখবে। তারপর বিদ্যুৎ চক্রবর্তী অতীত হয়ে যান। আর নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ বিদেশে পাড়ি দেন। এখন তিনি দেশে ফিরেছেন।
আরও পড়ুন: ‘আমরা বাবাজিকে খুঁজে পাইনি’, হাথরাসে পদপিষ্টের ঘটনায় মুখ খুললেন পুলিশকর্তা
আর দেশে ফিরেই নানা জায়গায় যাচ্ছেন অমর্ত্য। লোকসভা নির্বাচনের পরে ভারতে পা রেখেছেন। এখানে পা রেখেই গত বুধবার কেন্দ্রের নতুন এনডিএ সরকারকে বিঁধেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ। তাঁর বক্তব্য, ভারত যে হিন্দুরাষ্ট্র নয়, ভারতীয় ভোটারদের মধ্যে সেই মতের প্রতিফলন ঘটেছে। বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীদের জেলবন্দি করার কথাও শোনা গিয়েছে অমর্ত্য সেনের মুখে। তবে দেশে দশকের পর দশক ক্ষমতায় থাকা কংগ্রেসও দায় এড়াতে পারে না বলে অভিযোগ অমর্ত্য সেনের। এই কথা মোটেও ভাল লাগেনি বিজেপি নেতাদের। যদিও এখন পরিস্থিতির চাপে তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি কেউ।
এখন সংসদে বাদল অধিবেশন চলছে। সেখানে এনডিএ সরকারকে চেপে ধরেছে ইন্ডিয়া জোট। এই আবহেই দমদম বিমানবন্দরে পৌঁছে অমর্ত্য সেন রামমন্দির নিয়ে বলেছিলেন, ‘ভারতবর্ষ যে হিন্দুরাষ্ট্র নয়, ভারতীয় ভোটারদের সেই মতের প্রতিফলন ঘটেছে। অনেক খরচ করে বড় মন্দির বানিয়েছে। তার দুটো দিক আছে। এক, ভারতবর্ষকে হিন্দুত্বের নিরিখে দেখা। মহাত্মা গান্ধী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুভাষচন্দ্র বসুর দেশে এটা হওয়ার কথা নয়। দুই, ধনীদের উপর নির্ভরশীলতা বেশি। দরিদ্রদের অবহেলা করার প্রথা। যে মন্ত্রিসভা হয়েছে সেটা আগের মন্ত্রিসভার মতোই। মন্ত্রীরা সব একই। একটু রদবদল হলেও রাজনৈতিকভাবে যাঁরা শক্তিশালী, তাঁরা এখনও শক্তিশালী।’