ক্ষমতায় ছিল টানা ৩৪ বছর। পশ্চিমবঙ্গে সেই সিপিএম আট বছরেও জেলা কমিটি গড়তে পারল না। ঘটনাস্থল কালিম্পং। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার বাংলার মসনদে ২০১১ সালে বসার পর ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দার্জিলিং জেলা ভেঙে নতুন কালিম্পং জেলা গড়ে তোলা হয়। আর সিপিএম ২০১৬ সালের পর থেকে বাংলায় শূন্য হয়ে গিয়েছে। ২০২৫ সাল পর্যন্ত কোনও বিধায়ক বা সাংসদ বাংলা থেকেই নেই। নামেই বিরোধী দল। প্রধান বিরোধী দলের জায়গা নিয়ে নিয়েছে বিজেপি। সুতরাং পরিসংখ্যান বলছে, কালিম্পং জেলা তৈরি হয়েছে ৮ বছর হয়ে গিয়েছে। আর সিপিএম এখনও এখানে জেলা কমিটি তৈরি করতে পারেনি।
সিপিএমের গঠনতন্ত্রে আছে, যে জেলায় জেলা কমিটি গঠন সম্ভব হচ্ছে না সেখানে অর্গানাইজিং জেলা কমিটি গড়ে তোলা। এখানে এবার সিপিএমের সম্মেলনে তৃতীয় বারের জন্য অর্গানাইজিং জেলা কমিটি গড়ে তোলা হয়েছে। আর সেই কমিটিতে আছেন মাত্র ৯জন সদস্য। কালিম্পংয়ে জেলা কমিটি নেই বলে সিপিএমের জেলা সম্পাদকও নেই। পাহাড়ি নেতা তারা সুন্দাসকে আবার অর্গানাইজিং জেলা কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। আসলে সদস্য সংখ্যা ক্রমশ কমছে। নবীনই হোক আর প্রবীণ কোনও সদস্যই সিপিএমে আসছে না। উলটে যাঁরা ছিলেন তাঁরাও পাতলা হতে শুরু করেছেন।
আরও পড়ুন: মদনাবতী সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির ভোটে তৃণমূলের জয়জয়কার, ফাঁকা মাঠেই গোল
সিপিএমের রাজ্য কমিটি সূত্রে খবর, কালিম্পং জেলায় কয়েকশো সদস্য আছে। ব্রাঞ্চ, এরিয়া কমিটি, জেলা কমিটি গড়ে তুলতে গেলে নির্দিষ্ট সংখ্যার সদস্য থাকতে হয়। এটা সিপিএমের গঠনতন্ত্রে আছে। কিন্তু কালিম্পং জেলা গঠনের আট বছরে পরও সিপিএম সেই সংখ্যায় সদস্য সংগ্রহ করতে পারেনি। ইতিহাস বলছে, পাহাড়ে পরাধীন ভারত থাকাকালীন ১৯৪৬ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে কমিউনিস্ট নেতা রতনলাল ব্রাহ্মণ বিপুল ভোটে জয়ী হন। আর এখন স্বাধীন দেশে কালিম্পং জেলা কমিটি গঠন করতে পারল না সিপিএম। ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে জ্যোতি বসু, রতনলাল ব্রাহ্মণ এবং রূপনারায়ণ রায় এই তিন কমিউনিস্ট নেতা জয়ী হয়েছিলেন।
সিপিএমের সারা রাজ্যেই যা সংগঠনের হাল তাতে এখন নির্বাচন যুদ্ধে জয়ী হওয়া বেশ কঠিন। বিশেষ করে বামের ভোট যা রামে গিয়েছে তা না ফেরা পর্যন্ত। কালিম্পিং জেলা সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্রীদীপ ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘কালিম্পং জেলায় পার্টি খুব ছোট। যে মাপকাঠিতে জেলা কমিটি তৈরি হয় তা এখনও পূরণ হয়নি। তাই জেলা কমিটি গঠন করা যায়নি।’ আর প্রবীণ সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘দার্জিলিং, কার্শিয়াং, মিরিকের তুলনায় কালিম্পং জেলায় আমরা বরাবরই দুর্বল। পাহাড়ে চা–শ্রমিকদের নিয়ে কমিউনিস্ট পার্টি তৈরি হয়েছিল। কালিম্পংয়ে চা–বাগান কম। আমরা কখনও কালিম্পং বিধানসভা আসনে জিততে পারিনি।’