বাংলা নিউজ > বাংলার মুখ > অন্যান্য জেলা > Women's day 2023: মিলছে না ১০০ দিনের কাজের টাকা, নারী ক্ষমতায়নে কি পিছিয়ে পড়বে রাজ্য?

Women's day 2023: মিলছে না ১০০ দিনের কাজের টাকা, নারী ক্ষমতায়নে কি পিছিয়ে পড়বে রাজ্য?

নির্মল বাংলা প্রকল্পের কাজ চলছে। (ছবিটি প্রতীকী, সৌজন্য সঞ্জীব কুমার/হিন্দুস্তান টাইমস)

কেন্দ্রের যুক্তি হল, যেহেতু অন্যত্র বেশি মজুরিতে কাজ মিলছে, তাই মানুষে নারেগা প্রকল্প আগ্রহ হারাচ্ছেন। সদ্য কোভিড পরিস্থিতি থেকে মুক্ত হওয়ার পর পরিযায়ী শ্রমিকরা ১০০ দিনের কাজে যুক্ত হয়েছিলেন।

মহাত্মা গান্ধী জাতীয় কর্মনিশ্চতা প্রকল্প (নারেগা) কি গুরুত্ব হারাচ্ছে? গত বছর ডিসেম্বরে সংসদে সেই প্রশ্নই তুলেছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। বাজেটে অর্থ বরাদ্দও কমিয়েছেন তিনি। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে নারেগা (১০০ দিনের কাজ) প্রকল্পে ৬০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন। যদিও তিনি বলেছেন, প্রয়োজন পড়লে পর আরও বরাদ্দ বাড়ানো যেতে পারে। গত বাজেটে এই প্রকল্পে বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৭৩ হাজার কোটি টাকা। পরে অবশ্য তা বেড়ে হয় ৯৮ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ চলিত অর্থবর্ষে ১০০ দিনের কাজে বরাদ্দের পরিমাণ কমেছে ১৩ হাজার কোটি টাকা।

একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে নারেগা প্রকল্পে যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে, তাতে দেশ জুড়ে ১০০ দিনের কাজে যত জব কার্ড হোল্ডার আছেন, তাঁদের মাত্র ২০ দিনের মজুরি দেওয়া সম্ভব হবে। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হিসাব অনুযায়ী দেশে ১০ কোটি সক্রিয় জব কার্ড হোল্ডার আছেন। ৪০ দিনের মজুরি দিতেই লাগবে ১ লক্ষ ২৪ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ বাড়তি অর্থ বরাদ্দের রাস্তায় হাঁটতেই হবে কেন্দ্রকে।

১০০ দিনের কাজে কেন আগ্রহ কমছে?

কেন্দ্রের যুক্তি হল, যেহেতু অন্যত্র বেশি মজুরিতে কাজ মিলছে, তাই মানুষে নারেগা প্রকল্প আগ্রহ হারাচ্ছেন। সদ্য কোভিড পরিস্থিতি থেকে মুক্ত হওয়ার পর পরিযায়ী শ্রমিকরা ১০০ দিনের কাজে যুক্ত হয়েছিলেন। ফলে ২০২০-২১ অর্থবর্ষে ১০০ দিনের কাজে পরিবার ও ব্যক্তি পিছু অংশগ্রহণ বেড়েছিল উল্লেখযোগ্য হারে। গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের হিসাব অনুযায়ী, পরিবার পিছু ৩৮.৭ শতাংশ এবং ব্যক্তিপিছু ৪২.৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল ১০০ দিনের কাজে অংশগ্রহণ। কিন্তু ২০২১-২২ এবং ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে তা বেশ খানিকটা কমে।

তার কারণ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর শ্রমিকরা ফিরে গিয়েছেন তাঁদের কাজের জায়গায় ফলে ১০০ দিনের কাজে অংশগ্রহণ কমেছে। কিন্তু ওই দুই অর্থবর্ষের সঙ্গে কোভিড পূর্ববর্তী বছরগুলির সঙ্গে তুলনা করা যায়, তবে দেখা যাবে অল্প হলেও ১০০ দিনের কাজে অংশগ্রহণ বেড়েছে।

মহিলাদের অংশগ্রহণ বেড়েছে

নারেগা প্রকল্প চালু হওয়ার পর থেকে ১০০ দিনের কাজে মহিলাদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। পরিসংখ্যান বলছে মনরেগায় বর্তমানে মহিলাদের অংশগ্রহণ ৫৮ শতাংশ। এর অন্যতম কারণ, এই প্রকল্পে মেয়েদের এবং একলা মেয়েদের জন্য বিশেষ সংরক্ষণ ব্যবস্থা। উল্লেখযোগ্য ভাবে সবচেয়ে বেশি অংশগ্রহণ উত্তরপ্রদেশ ও বিহারে। কোভিডের পরেও কাজে যোগদানের ক্ষেত্রে খুব একটা তারতম্য হয়নি।

কেন মহিলারা এক'শ দিনের কাজ পছন্দ করেন?

এর একটা প্রধান কারণ হল মজুরির হার। অর্থাৎ কৃষি জমি বা অন্যত্র কাজ করে যে পরিমাণ মজুরি মেলে, তার চেয়ে বেশি মেলে ১০০ দিনের কাজে। তাছাড়া কৃষি জমিতে কাজ না থাকলেও এই প্রকল্পে কাজ মেলে। মেট বা ঠিকাদার মহিলা হওয়াতে কাজ করতে সুবিধাও হয়। ১০০ দিনের কাজে বড় আকর্ষণ হল বাড়ির কাছে কাজ মেলে। মজুরির টাকা ঢোকে স্বামীর অ্যাকাউন্টে নয়, মেয়েদের নিজস্ব অ্যাকাউন্টে। সব মিলিয়ে নারী ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে নারেগা প্রকল্প।

রাজ্যের অবস্থা

পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতিটাও দেশের অন্যান্য রাজ্যের মতোই। এখানেও নারেগা প্রকল্পে মহিলাদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। নারী ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রেও বড় ভূমিকা নেয় এই মনরেগা প্রকল্প। কিন্তু ১০০ দিনের কাজের বকেয়া টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে নানা শর্ত অরোপ করার অস্বস্তিতে নবান্ন। রাজ্যের হিসাবে মনরেগা প্রকল্পে কেন্দ্রের কাছে পাওনা ২৭০০ কোটি টাকা। বারবার আবেদন করার পরে মেলেনি সেই টাকা। কেন্দ্র জানিয়ে দিয়েছে কাগজপত্র ঠিকমতো জমা দিলেন মিলবে টাকা। রাজ্যের দাবি, তারা কাগজপত্র ঠিকমতো জমা দিয়েছে।

প্রশ্ন হল, কেন্দ্র-রাজ্যের এই টানাপোড়েনে কী ধাক্কা খাচ্ছে নারী ক্ষমতায়নের অন্যতম উপায় হয়ে ওঠা নারেগা প্রকল্প? উত্তরটা অবশ্যই হ্যাঁ। সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচনে আগে পরিস্থিতি বেহাল বুঝেই স্বনির্ভর প্রকল্পগুলিতে জোর দিয়েছে রাজ্য সরকার। নারেগার জব কার্ড হোল্ডারদের অন্যত্র কাজের ব্যবস্থা করছে। কিন্তু তাতে কি সমস্যার সমাধান হবে?

বন্ধ করুন