সুপ্রিম কোর্টে পিছিয়ে গেল ওবিসি শংসাপত্র বাতিল মামলার শুনানি। কলকাতা হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে পশ্চিমবঙ্গ সরকার যে মামলা দায়ের করেছে, তার শুনানি আগামী ২৮ জানুয়ারি এবং ২৯ জানুয়ারি হবে বলে জানিয়েছে শীর্ষ আদালত। বিচারপতি বিআর গভাই এবং বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মসিহের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে যে মামলায় বিস্তারিত শুনানির প্রয়োজন আছে। সেইসঙ্গে শীর্ষ আদালত আশ্বাস দিয়েছে যে আগামী মে'তে গ্রীষ্মকালীন ছুটি শুরু হওয়ার আগেই মামলা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আপাতত হাইকোর্টের রায়ই বহাল থাকল।
রাজ্যের আর্জি, সুপ্রিম আশ্বাস
সংবাদমাধ্যম লাইভ ল'র প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাজ্য সরকারের আইনজীবী কপিল সিব্বল আর্জি জানান যে নয়া শিক্ষাবর্ষ শুরুর আগে যেন ওবিসি মামলার ফয়সালা করা হয়। যিনি আগেই শীর্ষ আদালতে সওয়াল করেছিলেন যে হাইকোর্টের রায়ের কারণে সাধারণ মানুষ ওবিসি শংসাপত্র ব্যবহার করতে পারছেন না। আটকে রয়েছে নিয়োগ প্রক্রিয়া। আর সেটার প্রেক্ষিতেই মে'র মধ্যে সেই মামলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আশ্বাসবাণী দিয়েছে বিচারপতি গভাই এবং বিচারপতি মসিহের ডিভিশন বেঞ্চ।
ওবিসি শংসাপত্র বাতিলের রায় হাইকোর্টের
আর হাইকোর্টের যে রায়ের প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টে এসেছে রাজ্য, তা গত ২২ মে দিয়েছিল বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার ডিভিশন বেঞ্চ। ২০১০ সাল থেকে পশ্চিমবঙ্গে সব ওবিসি শংসাপত্র বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিল।
সবমিলিয়ে ২০১০ সালের এপ্রিল থেকে ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৭৭টি শ্রেণিকে ওবিসি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত বাতিল করে দিয়েছিল হাইকোর্ট। সেইসঙ্গে ২০১২ সালের পশ্চিমবঙ্গ অনগ্রসর শ্রেণি আইনের (তফসিলি জাতি ও তফসিলি উপজাতি ছাড়া অন্য শ্রেণি) আওতায় ৩৭টি শ্রেণিকে যে ওবিসি তকমা প্রদান করা হয়েছিল, সেটাও খারিজ করে দিয়েছিল হাইকোর্ট।
বিচারপতি চক্রবর্তী এবং বিচারপতি মান্থার ডিভিশন বেঞ্চ বলেছিল, ‘এই আদালত মনে করছে যে মুসলিমদের ৭৭টি শ্রেণিকে অনগ্রসর বলে চিহ্নিত করার বিষয়টি সার্বিকভাবে পুরো সম্প্রদায়ের জন্য অপমানজনক। রাজনৈতিক স্বার্থে ওই সম্প্রদায়গুলিকে যে পণ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়নি, তা নিয়ে আদালত যে সন্দেহ-মুক্ত, তা নয়। যে যে ঘটনার রেশ ধরে (ওই) ৭৭টি শ্রেণিকে ওবিসি তকমা দেওয়ার হয়েছিল, তা দেখে এটা স্পষ্ট যে (ওই শ্রেণিগুলিকে) ভোটব্যাঙ্ক হিসেবে গণ্য করা হয়েছিল।’
‘ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ প্রদান করা যায় না’
সেই রায়ের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার যখন সুপ্রিম কোর্টে আসে, তখন শীর্ষ আদালত স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয় যে ধর্মের ভিত্তিতে কখনও সংরক্ষণ প্রদান করা যায় না। যদিও রাজ্যের তরফে দাবি করা হয় যে 'ধর্মের ভিত্তিতে' কোনও শ্রেণিকে ওবিসি তালিকায় যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। বরং ‘অনগ্রসরতার বিচারেই সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল বলে রাজ্যের তরফে দাবি করা হয়।