শুরু হয়ে গিয়েছে সেই প্যাচপ্যাচে গরম। সকাল থেকেই চড়া রোদ। কিছুই যেন ভালো লাগছে না। এদিকে কাজের চাপও বাড়ছে। এই সময় একবার পাহাড়ের কোলে দুদন্ড বসতে পারেন, মন ভালো হয়ে যাবে। আর উপরি পাওনা হিসাবে আপনি পাহাড়ের প্রেমেও পড়ে যেতে পারেন। আর পাহাড় মানেই যে জায়গার নাম সবার আগে ভেসে ওঠে সেটা অবশ্যই দার্জিলিং। কিন্তু শহর দার্জিলিং তো ক্রমেই ঘিঞ্জি হয়ে যাচ্ছে দিন কে দিন। এখন অনেকেই খুঁজছেন নির্জনতায় মোড়া দার্জিলিং। চালু কথায় অফবিট দার্জিলিং। আর অফবিট দার্জিলিং বলতে যে জায়গাগুলোর নাম সবার আগে মনে আসে তার মধ্যে একেবারে ওপরের দিকে থাকে চারখোল (Charkhole)।
শান্ত, স্নিগ্ধ, নির্জনতায় মোড়া পাহাড়ি গ্রাম। ছোট ছোট কমলালেবুর বাগান। এলাচের চাষ। তার মাঝে পায়ে চলা পথ। সেই পথ আপনাকে যে গ্রামে নিয়ে যাবে তার নামই চারখোল। দেখবেন এই গ্রামে আপনার জোরে কথা বলতেও ইচ্ছা করবে না। আর গ্রাম থেকে যখন দেখবেন শ্বেত শুভ্র কাঞ্জনজঙ্ঘা, তখন মনের ভেতর জমে থাকা অভিমান কখন যে মিলিয়ে যাবে বুঝতেই পারবেন না।
হোম স্টের বারান্দায় বসে একবার ভিড়ে ঠাসা, বনগাঁ লোকাল কিংবা অফিস ফেরৎ বাসের কথা ভাবুন। মনে মনে শুধু একটাই কথা মনে আসবে,অফিস আর বাড়ি করতে গিয়ে কত কিছুই তো করা হল না এই জীবনে। প্রিয়জনকেও বলা হল না তোমাকে কতটা ভালোবাসি, কতটা আগলে রাখি। আর চারখোলে এসে বলেই দিতে পারেন এতদিনের না বলা সেই কথাটা।
কালিম্পং শহরের ২৭ ফুট দূরে ছোট্ট গ্রাম চারখোল। একাধিক হোমস্টে রয়েছে। আগে থেকে বুক করে চলে আসতে পারেন। প্রায় ৫৫০০ ফুট উচ্চতায় রয়েছে এই পাহাড়ি গ্রাম। লোলেগাঁও থেকে ওই গ্রামের দূরত্ব প্রায় ১৫ কিমি। রেলি নদীর অববাহিকায় সামালবং অঞ্চলের ছোট্ট গ্রাম এই চারখোল।
এই গ্রাম একেবারে পাখির স্বর্গরাজ্য। নেওড়াভ্যালি ন্যাশানাল পার্কের অন্তর্গত। নাম না জানা ফুল আর পাখিরদের বাস। মন ভরে দেখুন ওদের। কিন্তু বিরক্ত করবেন না। শহরের কলুষতা থেকে অনেক দূরে এই ছোট্ট গ্রাম। মূলত লেপচা সম্প্রদায়ের বাস এখানে। তাঁদের আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়ে যাবেন। এখান থেকে কাছেই ঝান্ডিদারা ভিউ পয়েন্ট। সেখান থেকে সূর্যোদয় দেখতে যাতে পারেন। কাঞ্চনজঙ্ঘার ১৮০ ডিগ্রি ভিউ এখান থেকেও দেখা যায়। এখান থেকে লাভা, লোলেগাঁও, রিশপ, কোলাখাম, পেডং ঘুরে আসতে পারেন।
কালিম্পং থেকে প্রায় ২৭ কিমি দূরে চারখোল। এখান থেকে কাছেই আছে চুইখিম। সেখানেও ঘুরে আসতে পারেন। ঝুলন্ত ব্রিজের উপর দাঁড়ান কিছুটা সময়। চারপাশে সবুজে সবুজ। খুব ভালো লাগবে। এককথায় নির্জনতা যাঁরা ভালোবাসেন তাদের জন্য আদর্শ জায়গা চারখোল।
কীভাবে যাবেন চারখোল? এনজেপি, বাগডোগরা অথবা দার্জিলিং থেকে সরাসরি গাড়ি ভাড়া করে যেতে পারেন চারখোল।