দুর্গাপুরে ওড়িশা থেকে আসা এক মেডিক্যাল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগ ঘিরে উত্তাল হয়েছে রাজ্য। ঘটনায় ইতিমধ্যেই চার জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সর্বশেষ অভিযুক্ত হিসেবে ধরা পড়েছেন দুর্গাপুর পুরনিগমের অস্থায়ী এক কর্মী। এখনও পঞ্চম অভিযুক্তের সন্ধানে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।
আরও পড়ুন: অত রাতে ছাত্রী কীভাবে ক্যাম্পাসের বাইরে গেল? দুর্গাপুর ধর্ষণকাণ্ডে দাবি মমতার
গত সপ্তাহে অভিযোগ দায়ের করেন ওই ছাত্রী। তিনি বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অভিযোগপত্রে পাঁচ জনের নাম উল্লেখ ছিল। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের প্রত্যেকেরই ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। একই সঙ্গে ঘটনার রাতে সঙ্গে থাকা আক্রান্ত তরুণীর এক সহপাঠীকেও আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তদন্তকারী কর্তারা জানিয়েছেন, নিরাপত্তার কারণেও সেই যুবককে এখনই আটক রাখা হচ্ছে। ওই তরুণীর বাবা-মা ইতিমধ্যেই ওড়িশা থেকে দুর্গাপুরে এসে হাসপাতালে মেয়ের পাশে রয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গে তাঁরা আর নিরাপদ বোধ করছেন না। মেয়েকে সুস্থ করেই নিয়ে যেতে চান ওড়িশায়।
তাঁদের ক্ষোভ ও অসন্তোষকে ঘিরে নতুন মাত্রা পেয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। বিজেপি ইতিমধ্যেই দুর্গাপুরে ধর্নার প্রস্তুতি নিয়েছে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সোমবার সশরীরে গিয়ে দোষীদের কড়া শাস্তির দাবিতে অবস্থান বিক্ষোভে বসবেন। হাসপাতালে গিয়ে নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করবেন বলেও ঘোষণা করেছেন।
এই ঘটনার মাঝে তৃণমূল নেতৃত্বও ময়দানে নেমেছে। পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি ও বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, প্রথম দিন থেকেই রাজ্যের দুই মন্ত্রী মলয় ঘটক ও প্রদীপ মজুমদার পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে সক্রিয় যোগাযোগ রাখছেন। তৎপরতার ফলেই অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে শোনা যায়। উত্তরবঙ্গ যাওয়ার পথে তিনি বলেন, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। কলেজ কর্তৃপক্ষের আরও সতর্ক থাকা উচিত ছিল। পাশাপাশি, তিনি সতর্কবার্তা দেন, রাতের বেলা ছাত্রীরা যেন ক্যাম্পাসের বাইরে না বেরোন, সে বিষয়ে কলেজগুলিকে দায়িত্ব নিতে হবে। এদিকে, ওড়িশা থেকে এক প্রতিনিধি দল রবিবারই দুর্গাপুরে পৌঁছয়। কিন্তু অভিযোগ ওঠে তাঁদের হাসপাতালে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। আজ সোমবার ওড়িশা মহিলা কমিশনের প্রতিনিধি দল আসবেন এবং পুরো পরিস্থিতি নিজেরাই খতিয়ে দেখে সরকারকে রিপোর্ট দেবেন বলে জানা গেছে। ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহনচরণ মাঝী উদ্বেগ প্রকাশ করে পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসনের কাছে দোষীদের দ্রুত ও কঠোর শাস্তির দাবি করেছেন। দুর্গাপুর পুরনিগমের সঙ্গে যুক্ত অভিযুক্ত অস্থায়ী কর্মীর গ্রেফতারের পর মামলাটি আরও স্পর্শকাতর হয়ে উঠেছে। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা।