আবারও সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করতে নেমে মৃত্যুর ঘটনা ঘটল। তবে, এবার শুধুমাত্র কর্মরত সাফাইকর্মী নয়, প্রাণ গেল গৃহকর্তার সম্বন্ধীরও। এমনকী, ঘটনায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন গৃহকর্তা ও তাঁর পুত্রবধূও। বিষয়টি নিয়ে হইচই শুরু হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামে।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের ভেকুটিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা কানাই জানা। ৬০ বছরের কানাই জানার বাড়িতেই সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করার কাজে নামেন বছর পঞ্চাশের মৃত্যুঞ্জয় জানা। কিন্তু, কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।
একথা জানার পরই মৃত্যুঞ্জয়কে সাহায্য় করতে এবং তাঁকে তুলে আনতে সেপটিক ট্যাঙ্কের ভিতর ঢোকেন মানস গিরি। ৫৬ বছরের মানস গিরি আসলে কানাই জানার সম্বন্ধী - তাঁর ছেলের শ্বশুর। কিন্তু, ওই প্রৌঢ়ও সেপটিক ঢোকার কিছুক্ষণের মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এরপর এই দু'জনকে উদ্ধার করতে কানাই নিজেই ঢুকে পড়েন সেপটিক ট্যাঙ্কের ভিতর। এমনকী, তাঁর পুত্রবধূও শ্বশুরকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন। ফলস্বরূপ একসঙ্গে চারজনই অসুস্থ হয়ে পড়েন।
পরবর্তীতে তাঁদের চারজনকেই উদ্ধার করা হলেও সাফাইকর্মী মৃত্যুঞ্জয় জানা ও কানাইয়ের সম্বন্ধী মানস গিরিকে বাঁচানো যায়নি। প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে, সেপটিক ট্যাঙ্কের ভিতর বিষাক্ত গ্যাসের প্রভাবেই তাঁদের প্রাণ গিয়েছে। একই কারণে বাকি দু'জনও গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁদের নন্দীগ্রাম সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
কানাইয়ে ছেলে প্রসেনজিৎ জানা একজন সিভিক ভলান্টিয়ার। আচমকা এমন ঘটনায় ভেঙে পড়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য, মাত্র ক'দিন আগেই একইভাবে সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করতে নেমে বিষাক্ত গ্যাসে দম আটকে প্রাণ গিয়েছিল দুই তরুণ সাফাইকর্মীর। ঘটনাটি ঘটেছিল শ্যামনগরের হরিকানা এলাকায়। মৃতরা হলেন কাবিল শেখ (২০) এবং মুস্তাফিজুর রহমান (১৯)। তাঁরা ওই গ্রামেরই বাসিন্দা ছিলেন। তাঁদের উদ্ধার করতে গিয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন গ্রামেরই আরও তিন বাসিন্দা।
সেই ঘটনায় স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছিল, প্রায় ১৫ ফুট গভীর সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করতে নেমেছিলেন কাবিল ও মুস্তাফিজুর। কিন্তু, দীর্ঘক্ষণ তাঁদের কোনও সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না। তাতেই সন্দেহ হয় বাড়ির কর্তার। এরপরই দেখা যায়, ট্যাঙ্কের মেঝেয় পড়ে রয়েছেন দুই সাফাইকর্মী। পরবর্তীতে তাঁদের সেখান থেকে বের করে আনা হলেও প্রাণ বাঁচানো যায়নি।
এছাড়াও, সম্প্রতি কলকাতায় ম্যানহোল পরিষ্কার করতেও নেমেও সাফাইকর্মীদের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। বারবার এমন ঘটনা কেন ঘটছে, কেন আমজনতা এবং সাফাইকর্মীদের এই বিষয়ে সচেতন করা যাচ্ছে না, কেন প্রশাসন কঠোর হাতে সমস্যা মোকাবিলা করছে না, এইসব প্রশ্ন উঠছেই।