কলকাতা, শিলিগুড়ি, বহরমপুর : গন্তব্য ছিল বাংলাদেশ। আচমকা পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ রাখার নির্দেশিকার পরই ওপার বাংলাগামী ট্রাকগুলিকে রাজ্যের বিভিন্ন পাইকারি বাজারে ঘুরিয়ে নেওয়ার পথে হেঁটেছেন রফতানিকারীরা। ফলস্বরূপ বাংলার বিভিন্ন প্রান্তের খুচরো বাজারে অনেকটা পড়ল পেঁয়াজের দাম।
অত্যাবশ্যকীয় পণ্য সংক্রান্ত রাজ্য সরকারের টাস্ক ফোর্সের সদস্য রবীন্দ্রনাথ কোলে জানান, যে পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাকগুলিকে লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) দেওয়া হয়নি, সেগুলির মুখ ঘুরিয়ে রফতানিকারীরা স্থানীয় পাইকারি বাজারে নিয়ে এসেছেন। তার জেরে স্বভাবতই পড়েছে পেঁয়াজের দাম। তিনি বলেন, ‘আমি কলকাতার বাজারে গিয়েছিলাম। ৩৫ টাকায় এক কিলোগ্রাম পেঁয়াজ কিনলাম। চলতি সপ্তাহের গোড়াতেই ৪০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিকোচ্ছিল।’
আরও পড়ুন : ঢাকায় প্রয়াত হেফাজতে ইসলামের প্রধান আহমেদ শফি
একই ছবি ধরা পড়েছে উত্তরবঙ্গেও। শিলিগুড়ির বাজারে একধাক্কায় কিলোপ্রতি পেঁয়াজের দাম পাঁচ থেকে সাত টাকা কমে গিয়েছে। পেঁয়াজের পাইকারি কারবারি রাম অবতার প্রসাদ বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগেও খুচরো বাজারে পেঁয়াজের দাম ৩৩ থেকে ৩৫ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করছিল। এখন তা ২৮ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে আছে। রফতানির বন্ধ রাখার নির্দেশিকার ফলেই দাম কমেছে। নাসিক, ইন্দোর-সহ দেশের অন্যান্য বড় বাজারের যে পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাকগুলি ইতিমধ্যে বাংলায় পৌঁছে গিয়েছিল, সেগুলিকে স্থানীয় বাজারে ঘুরিয়ে দেওয়া হযেছে।’
গত কয়েকদিন ধরে ক্রমশ বাড়ছিল পেঁয়াজের দাম। বিশেষত নাসিকের পেঁয়াজের দাম তো লাগামছাড়া হারে বাড়ছিল। সেই পরিস্থিতিতে গত ১৪ সেপ্টেম্বর বিজ্ঞপ্তি জারি করে বিদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় কেন্দ্রের ডিরেক্টর জেনারেল অফ ফরেন ট্রেড (ডিজিএফটি)। কিন্তু আচমকা পেঁয়াজ রফতানির বন্ধের ঘোষণায় বিপাকে পড়েছেন পেঁয়াজ কারবারিরা। সীমান্তে দাঁড়িয়ে থাকার ফলে পেঁয়াজে পচন ধরবে বলে আশঙ্কা তাঁদের।
আরও পড়ুন : দাম চড়ার অশনি সংকেত, পেঁয়াজ রফতানির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ কেন্দ্রের
ওয়েস্ট বেঙ্গল এক্সপোটার্স কো-অর্ডিনেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক উজ্জল সাহা বলেন, ‘মালদহ, উত্তর দিনাজপুর, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি এবং উত্তর ২৪ পরগনার স্থলবাণিজ্য বন্দরে শয়ে শয়ে পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে। সাধারণত প্রতিটি ট্রাকে ২৫ মেট্রিক টন পেঁয়াজ থাকে। নীচের দিকে যে বস্তাগুলি আছে, সেগুলির পেঁয়াজে ইতিমধ্যে পচন ধরে গিয়েছে। আমাদের আশঙ্কা, ১০ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।’
সেই বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে জেনারেল অফ ফরেন ট্রেড (ডিজিএফটি) চিঠি পাঠানো হয়েছে। ইতিমধ্যে যে ট্রাকগুলিকে লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) দেওয়া হয়েছে, সেগুলিকে বাংলাদেশ যাওয়ার ছাড়পত্র দেওয়ার আর্জি জানানো হয়েছে। ওয়েস্ট বেঙ্গল এক্সপোটার্স কো-অর্ডিনেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘১৫ সেপ্টেম্বর ডিজিএফটিকে চিঠি লিখেছি আমরা। তাতে জানিয়েছি যে রফতানিকারীরা সেই নির্দেশ পালনের ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়ছে। কারণ ইতিমধ্যে অনেক ট্রাককে লেটার অব ক্রেডিট দিয়েছে আমদানিকারক দেশের ব্যাঙ্কগুলি। সেই ট্রাকগুলি স্থানীয় বাজারে নিয়ে যাওয়া কঠিন। কারণ তা প্রতিজ্ঞার ভঙ্গ হবে। যে ট্রাকগুলি ১৪ সেপ্টেম্বরের আগে সীমান্তে পৌঁছে গিয়েছে, সেগুলি দেশ ছাড়ার অনুমতি দেওয়ার আর্জি জানিয়েছি আমরা।'
আরও পড়ুন : বাংলাদেশ থেকে যতটা পেঁয়াজ রফতানির বরাত নেওয়া হয়েছিল, সেটা পাঠিয়ে দেবে ভারত
আচমকা পেঁয়াজ পাঠানো বন্ধ করে দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ঢাকাও। তারপরই নড়চড়ে বসে কেন্দ্র। রাতের দিকে কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে, যে পরিমাণ পেঁয়াজের বরাত ইতিমধ্যে নেওয়া হয়েছে, তা বাংলাদেশে পাঠানো হবে।