এত নগদ টাকার উৎস কী? পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা জঙ্গিপুরের তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক জাকির হোসেনের বাড়ি ও কারখানা-গুদাম থেকে কমপক্ষে ১১ কোটি টাকা উদ্ধারের পর সেই প্রশ্নই উঠতে শুরু করেছে।
বুধবার সকালে জাকিরের বাড়ি, কারখানা, মিল, গুদামে অভিযান চালায় আয়কর দফতর। যে অভিযান বৃহস্পতিবার (ইংরেজি মতে) ভোররাত ৩ টে ৩০ মিনিট পর্যন্ত চলে। জাকিরের বিড়ি কারখানা, তেলকলেও তল্লাশি চালানো হয়। সেইসঙ্গে মুর্শিদাবাদের আরও দুটি বিড়ি কারখানা থেকে ৫.৫ কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আয়কর দফতর।
আয়কর দফতরের প্রতিক্রিয়া
বৃহস্পতিবার আয়কর দফতরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, জাকিরের বাড়ি থেকে এক কোটি টাকার মতো বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তাঁর চাল ও অন্যান্য মিল থেকে আরও ১০ কোটি টাকার মতো উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আয়কর দফতরের ওই আধিকারিক।
জাকিরের প্রতিক্রিয়া
জাকিরের হাতে আছে একাধিক বিড়ি কারখানা ও একাধিক মিল। তিনি বলেন, 'আমার অধীনে প্রায় ৭,০০০ শ্রমিক কাজ করেন। তাঁদের নগদে বেতন দিতে হত। আমার বাড়ি এবং কারখানায় অভিযান চালানো হয়। যে টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, তা শ্রমিক ও কৃষকদের দেওয়ার জন্য রাখা ছিল। আমি ওঁদের (আয়কর আধিকারিকরা) কাগজপত্র দেখিয়েছি। কিন্তু ওঁরা আমার কথার ভ্রূক্ষেপ করেননি। সুরক্ষার কারণে মাঝেমধ্যে আমাদের বাড়িতে নগদ টাকা রাখতে হয়। আইন নিজের পথেই চলবে। আমি কর দিই এবং আধিকারিকদের সহযোগিতা করি।'
আরও পড়ুন: শ্রমিকদের বেতন দিতে নগদ রাখতে হয়, আয়কর হানার পর দাবি জাকির হোসেনের
বোমা বিস্ফোরণে জখম জাকির
২০২১ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে বোমা বিস্ফোরণে আহত হয়েছিলেন জাকির। সেইসময় রাজ্যের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। কলকাতায় আসার ট্রেন ধরার জন্য ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি রাত ১০ টা নাগাদ নিমতিতা স্টেশনে এসেছিলেন। দুই এবং তিন প্ল্যাটফর্মের পড়ে থাকা একটি ব্যাগে থাকা বোমার বিস্ফোরণ হয়েছিল। আহত হয়েছিলেন জাকির। তার জেরে প্রায় তিন মাস হাসপাতালে ভরতি ছিলেন।
সেই ঘটনার মধ্যেই জঙ্গিপুরের বামফ্রন্টের প্রার্থীর মৃত্যু হয়েছিল। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হয়েছিলেন তিনি। সেই ঘটনার জেরে জাকিরের জঙ্গিপুরে ভোটগ্রহণ স্থগিত রাখা হয়েছিল। পরবর্তীতে সেখানে ভোটগ্রহণ হয়েছিল। তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে ভোটেও জেতেন জাকির। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃতীয় তৃণমূল সরকারে কোনও মন্ত্রিত্ব মেলেনি।
ওই বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার তদন্তে প্রাথমিক সিট গঠন করেছিল রাজ্য সরকার। পরে সিআইডির হাতে তদন্তভার গিয়েছিলেন। সপ্তাহদুয়েক পরে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) তদন্ত শুরু করে। পরবর্তীতে চার্জশিট পেশ করেছিল এনআইএ। সিআইডি যে দু'জনকে গ্রেফতার করেছিল, তাদের বিরুদ্ধেই চার্জশিট পেশ করেছিল। সেই প্রেক্ষিতে গত বছর জাকির দাবি করেছিলেন, লোক দেখানো চার্জশিট পেশ করেছে এনআইএ। প্রকৃত দোষীদের গ্রেফতার করা হয়নি।
তৃণমূলে আগমন জাকিরের
প্রত্যক্ষ রাজনীতি না থাকলেও তাঁর প্রভাব-প্রতিপত্তি নেহাত কম ছিল না। ২০১৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে যোগ দেন জাকির। মুর্শিদাবাদে তৃণমূলের তৎকালীন পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরে ঘাসফুল শিবিরে যোগ দেন। পরের বছরেই জঙ্গিপুর কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের টিকিটে লড়াই করেছিলেন জাকির। তাতে জিতে মন্ত্রী হয়েছিলেন। শ্রম দফতরের প্রতিমন্ত্রী করেছিলেন মমতা।