আড়াই বছরের শিশুকে 'ব্যাড টাচ' করার অভিযোগে স্কুলে চড়াও হলেন অভিভাবকদের একাংশ। মারধর করা হল ওই নার্সারি স্কুলের অধ্যক্ষার স্বামীকে। যদিও প্রাথমিকভাবে শিশুটিকে হেনস্থা করার কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেছেন অধ্যক্ষা। তা সত্ত্বেও অভিভাবকদের একাংশের প্রবল ক্ষোভের মুখে স্কুলের নিরাপত্তারক্ষীকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার এই গোটা ঘটনা ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায় হুগলির হিন্দমোটরের একটি নার্সারি স্কুলে। ঘটনা প্রসঙ্গে জানা গিয়েছে, এই স্কুলেরই এক পড়ুয়া আড়াই বছরের এক ছাত্রী। সে গত কয়েক দিন ধরেই স্কুলে আসতে চাইছিল না।
বাচ্চাটির পরিবারের সদস্যদের দাবি, সে মারাত্মক ভয় পেয়েছে। তাই স্কুলে আসতে চাইছে না। এমনকী, কেন সে এমন আচরণ করছে, সেই প্রশ্ন করা হলে শিশুটি নাকি তার বাবা-মাকে জানায়, স্কুলের এক আঙ্কল তাকে 'ব্যাড টাচ' করেছে। তাই সে স্কুলে যাবে না।
এই অবস্থায় বৃহস্পতিবার শিশুটির পরিবারের সদস্যরা স্কুলে পৌঁছন এবং তাঁরা অন্য অভিভাবকদের গোটা ঘটনা জানান। তাতেই অভিভাবকদের একাংশ স্কুলে চড়াও হন। অভিভাবকদের দাবি মেনে স্কুলের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হয়। কিন্তু, তাতে কোনও শিশুকেই হেনস্থা করা হয়েছে, এমন কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে দাবি করা হচ্ছে।
তবুও স্কুলে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়তে থাকায় অধ্যক্ষা রিমি চৌধুরী ক্ষিপ্ত অভিভাবকদের বুঝিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করেন। সেই সময় তাঁর সঙ্গে তাঁর স্বামীও ছিলেন। অভিযোগ, তখনই অভিভাবকদের একাংশ মারমুখী হয়ে ওঠেন এবং রিমির স্বামীকে ধরে মারতে শুরু করেন। যদিও বাকি অভিভাবকরা এগিয়ে এসে বাধা দেন। ততক্ষণে সেখানে পুলিশও পৌঁছে যায়।
পুলিশ এবং অভিভাবকদের অন্য একটি অংশ অধ্যক্ষার স্বামীকে বাকিদের রোষের হাত থেকে বাঁচাতে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যান। অন্যদিকে, স্কুলের নিরাপত্তারক্ষীকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তাঁকে উত্তরপাড়া থানার পুলিশ আটক করে নিয়ে গিয়েছে।
শেষ খবর পাওয়া অনুসারে, পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যদি এই ঘটনা নিয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ করেন, তাহলে পকসো আইনের অধীনে মামলা রুজু করা হবে।
স্কুলের অধ্যক্ষা রিমি চৌধুরী জানান, যাঁরা সেখানে বাচ্চাদের দেখাশোনা করেন, তাঁরা সকলেই মহিলা। ফলত প্রশ্ন উঠছে, তাহলে পরিবারের দাবি মতো 'স্কুলের আঙ্কল' বলতে শিশুটি ঠিক কাকে বোঝাতে চেয়েছে?
রিমি জানিয়েছেন, অভিযোগ ওঠার পরই সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হয়েছে। সেই ফুটেজ পুলিশও দেখেছে। কিন্তু, তাতে লক্ষ্যণীয় কিছু পাওয়া যায়নি। তবুও, শুধুমাত্র অভিযোগ উঠেছে বলেই স্কুলের নিরাপত্তারক্ষীকে আটক করা হয়েছে।
যদিও অভিভাবকদের একটি অংশ দাবি করছেন, এই স্কুলের অধ্যক্ষা এবং অন্য কর্মীরা বাচ্চাদের ঠিক মতো দেখভালই করেন না। সেই কারণেই এমন ঘটনা ঘটেছে। কারণ, ওই অভিভাবকদের যুক্তি হল, আড়াই বছরের একটি বাচ্চা মোটেও বানিয়ে কথা বলতে বা মিথ্য়া অভিযোগ করতে পারে না। তাঁদের আশঙ্কা, নিশ্চয় খারাপ কিছু ঘটেছে। তাই শিশুটি ভয়ে স্কুলে আসতে চাইছে না।