পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ‘ঘনিষ্ঠ’ মোনালিসা দাসের দাদার নামে একাধিক জমির হদিশ পেল সিবিআই। পার্থের ঘনিষ্ঠ পরিচয় দিয়ে মোনালিসার দাদা মানস দাস এবং তাঁর সঙ্গী নদিয়ায় প্রচুর জমি হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মোনালিসার দাদা।
গত মঙ্গলবার রানাঘাটের একটি রেজিস্ট্রি অফিসে অভিযান চালায় সিবিআই। পায়রাডাঙায় একাধিক জমির মালিকানা নিয়ে সন্দেহ দানা বেঁধেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী আধিকারিকদের মনে। ওই জমিগুলিতে জেলবন্দি পার্থের কোনও বিনিয়োগ আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে রেজিস্ট্রি অফিসে অভিযান চালানো হয়। বাজেয়াপ্ত করা হয় একাধিক জমির দলিল।
তারপর শনিবার রানাঘাট দু'নম্বর ব্লকের ভূমি-রাজস্ব দফতর এবং ডিরেক্টরেট অব রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড স্ট্যাম্প রেভিনিউয়ের দফতরে অভিযান চালায় সিবিআই। ভূমি-রাজস্ব আধিকারিক জয়তী বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ভূমিরাজস্ব দফতর থেকে একাধিক নথি সংগ্রহ করেছেন সিবিআই গোয়েন্দারা। তবে কী কী নথি সংগ্রহ করা হয়েছে, তা জানাননি ভূমি-রাজস্ব আধিকারিক।
আরও পড়ুন: SSC scam: ‘আমার বোনের নামে বানানো খবর রটানো হচ্ছে’, অভিযোগ মোনালিসার দাদার
তবে সূত্রের খবর, ভূমি-রাজস্ব দফতরের নথিপত্র থেকে রানাঘাট দু'নম্বর ব্লকের পাঁচটি এলাকার হদিশ মিলেছে, যেখানে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মোনালিসার দাদা মানসের নামে প্রচুর জমি আছে। সেইসঙ্গে ডিরেক্টরেট অব রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড স্ট্যাম্প রেভিনিউয়ের দফতর থেকে একাধিক নথি সংগ্রহ করা হয়েছে। সেই নথিতেও একাধিক জমির মালিক হিসেবে মানসের নাম আছে বলে সূত্রের খবর।
মানস দাস কে?
অভিযোগ, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থের ঘনিষ্ঠ দাবি করে নদিয়ায় প্রচুর জমি হাতিয়ে নিয়েছেন মানস এবং তাঁর সঙ্গী মনোজ ঘোষ। প্রভাব খাটিয়ে প্রচুর বেআইনি কাজ করেছেন। যে মানস নিজেকে সমাজসেবী হিসেবে পরিচয় দিতেন বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের। তা নিয়ে পুলিশে অভিযোগ জানাতে গেলেও কোনও লাভ হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, মানস এবং মনোজের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচয় দেওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে ভয় পেতেন বলে দাবি করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের আরও দাবি, কোনও সাহায্য করেনি পুলিশ। উলটে ভুয়ো মামলায় ফাঁসানো হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন এক ব্যবসায়ী। যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রানাঘাট পুলিশ জেলার সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, এরকম কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি।
তারইমধ্যে সিবিআই সূত্রে খবর, ২০১৬ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত রানাঘাটের দুটি ব্লকে প্রচুর জমি কিনেছিলেন। সেই লেনদেনের ক্ষেত্রে পার্থের কোনওরকম যোগসূত্র ছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর। সেইসঙ্গে স্থানীয় জমি ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন সিবিআই আধিকারিকরা।
আরও পড়ুন: Monalisa Das: এখন কোথায় ‘পার্থ ঘনিষ্ঠ’ সেই অধ্যাপক মোনালিসা দাস? শেষ পর্যন্ত জল্পনার অবসান
যদিও যাবতীয় অস্বীকার করেছেন মানস। তাঁর দাবি, সিবিআই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। কী কী নথি সংগ্রহ করেছে সিবিআই, তা নিয়েও কোনও ধারণা নেই বলে দাবি করেছেন মোনালিসার দাদা। যে মোনালিসার নাম পার্থ ঘনিষ্ঠ অর্পিতার বাড়ি থেকে কোটি-কোটি টাকা উদ্ধারের পর উঠে এসেছিল। স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) দুর্নীতি মামলায় আপাতত পার্থ এবং অর্পিতা দু'জনেই জেলে আছেন।