হাতে আর দু’দিন বাকি। তারপরই দুর্গাপুজো শুরু হয়ে যাবে রাজ্যজুড়ে। এই আবহে আজ, রবিবার পটাশপুরে মৃতার দেহের ময়নাতদন্ত নিয়ে চূড়ান্ত অখুশি গোটা পরিবার। রবিবার পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, ময়নাতদন্তের পর দেহ নিতে অস্বীকার করলেন মৃতার ছেলে–সহ পরিবারের সদস্যরা। উলটে আগামীকাল সোমবার এই বিষয়টি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার হুমকি দিয়েছেন তাঁরা। পটাশপুরে গৃহবধূকে নিগ্রহ করে খুন করার অভিযোগ উঠেছে। গণপিটুনিতে মৃত্যু হয় অভিযুক্ত ব্যক্তির। পটাশপুরের ঘটনায় এবার স্থানীয় থানার পক্ষ থেকে একটি স্বতঃপ্রণোদিত গণপিটুনির মামলা দায়ের করা হয়েছে।
আজ, রবিবার তাম্রলিপ্ত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মর্গে পটাশপুরের মৃতার দেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন পটাশপুর থানার তদন্তকারী অফিসার। উপস্থিত ছিলেন মহিলার ছেলে এবং পরিবারের সদস্যরা। পুলিশ সূত্রে খবর, ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে, ওই মহিলার বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়েছে বলে উঠে আসে। কিন্তু এই তথ্য মেনে নিতে নারাজ পরিবারের সদস্যরা। এই রিপোর্টে যে তাঁরা অখুশি সেটা তখনই বুঝিয়ে দেন তাঁরা। পরিবারের দাবি, প্রয়োজনে কলকাতা হাইকোর্টের হস্তক্ষেপে তমলুকের বাইরে অন্য কোনও বড় হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করতে হবে।
আরও পড়ুন: অবশেষে অনশনে হাজির আরজি কর হাসপাতালের ডাক্তাররা, ধর্মতলায় দু’জন কারা?
আজ রবিবার পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুরে গৃহবধূকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ ওঠে। অভিযুক্ত নির্যাতিতার প্রতিবেশী। ওই গৃহবধূর উপর অভিযুক্ত যুবকের অনেকদিন ধরেই কুনজর ছিল। তাঁকে আগে কুপ্রস্তাব দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। ওই গৃহবধূ তাঁকে সতর্ক করেন। কিন্তু শনিবার নির্যাতিতার স্বামী বাড়িতে ছিলেন না। তখন গৃহবধূকে বাড়িতে একা ছিলেন। আর ঘরে ঢোকেন ওই যুবক। তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। বাধা পাওয়ায় গৃহবধূকে মারধর করা হয়। এরপর তাঁকে কীটনাশক খাইয়ে খুন করা হয় বলে অভিযোগ। আর মৃতার ছেলে বলেন, ‘ময়নাতদন্তের পর পুলিশ জানায়, বিষক্রিয়ার জেরেই মায়ের মৃত্যু হয়েছে। ধর্ষণের মতো ঘটনার প্রমাণ মেলেনি। পুলিশ মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের জানালে তা নিতে অস্বীকার করেছি। এই রিপোর্টে আমরা মোটেই খুশি নই। তাই দেহ না নিয়েই ফিরে যাচ্ছি। সোমবার আমরা কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হবো।’
মৃতার পরিবারের সদস্যদের মতে, ওই মহিলার উপর যৌন নির্যাতন হয়েছে। তাঁর দেহ যখন উদ্ধার করা হয়, তখন তাঁর শরীরে পোশাক ছিল না। অথচ ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বলছে, বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়েছে। রবিবারই পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সাংবাদিক বৈঠক করে বিস্তারিত তথ্য জানান কাঁথির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) শুভেন্দ্র কুমার। তাঁর বক্তব্য, ‘আজ সকালে পটাশপুর থানা এলাকায় এক মহিলার মৃত্যুর খবর মেলে। প্রাথমিক তদন্তে জানতে পারি, গ্রামেরই এক ব্যক্তির সঙ্গে ওই মহিলার অবৈধ সম্পর্ক ছিল। সেই সম্পর্কের কথা জেনে ফেলার জন্যই ওই মহিলাকে মারধর করে কীটনাশক খাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে। আজ মহিলার মৃত্যুর খবর গ্রামে পৌঁছতেই বাসিন্দারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওই ব্যক্তিকে মারধর করেন। গণপিটুনিতে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। মৃতার পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে। সেখানেও বিষ খাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগপত্রে কোথাও ধর্ষণের কথার উল্লেখ নেই।’