আইন মেনে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রয়াত রোগীর আত্মীয়দের হাতে চরম হেনস্থার শিকার হতে হল জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসককে। সিনিয়র ডাক্তারদের নিরাপত্তা দিতে শেষমেশ জরুরি বিভাগের সামনে বসেই রাত জাগলেন ডাক্তারি পড়ুয়ারা! জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের ঘটনায় প্রশ্নের মুখে পুলিশের ভূমিকা।
যে রোগীকে নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত তাঁর নাম লিপিকা দাস। দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসার আক্রান্ত ওই মহিলা মাসকলাইবাড়ির বাসিন্দা ছিলেন। অবস্থার অবনতি হওয়ায় মঙ্গলবার রাতে তাঁকে জলপাইগুড়ি সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু, জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাঁকে পরীক্ষা করে জানান, হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
এরপর সরকারি নিয়ম মেনেই লিপিকার দেহের ময়নাতদন্ত করা হবে বলে তাঁর আত্মীয়দের জানিয়ে দেন কর্তব্যরত চিকিৎসক সব্যসাচী সেনগুপ্ত। বেঁকে বসেন রোগীর আত্মীয় ও পরিজনেরা। তাঁরা সাফ জানিয়ে দেন, ময়নাতদন্ত করতে দেবেন না। আর এ নিয়েই শুরু হয় বচসা।
অভিযোগ, এই বচসা চলাকালীন জরুরি বিভাগের মধ্যেই সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে রীতিমতো হেনস্থা করা হয়। তাঁকে 'দেখে নেওয়া'র হুমকিও দেওয়া হয়। চিকিৎসকের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাঁকে 'দু'পয়সার ডাক্তার' বলে অপমান করতেও শোনা যায় রোগীর আত্মীয়দের। ভয় দেখানো হয় এক মহিলা চিকিৎসককেও।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, ঘটনার সময় হাসপাতালে দু'জন পুলিশকর্মী থাকলেও তাঁরা ছিলেন সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয়। এমনকী, পরে যখন পুলিশ সক্রিয় হয়, তখনও ঝামেলা মেটানোর বদলে পুলিশকর্মীরা সমস্যা আরও বাড়িয়ে দেন বলে অভিযোগ কর্তব্যরত চিকিৎসকদের।
এদিকে, এই খবর চাউর হতেই হাসপাতালের ডাক্তারি পড়ুয়ারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান। সিনিয়র চিকিৎসকদের যাতে কোনও অনিষ্ট না হয়, তা নিশ্চিত করতে পুলিশের উপর ভরসা না করে তাঁরা নিজেরাই জরুরি বিভাগের সামনে বসে রাত পাহারার সিদ্ধান্ত নেন।
এসবের মধ্যেই জোর করে লিপিকার দেহ হাসপাতাল থেকে বের করে নিয়ে যান তাঁর বাড়ির সদস্যরা। পুলিশ থাকা সত্ত্বেও কীভাবে এই ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই চিকিৎসক মহলে প্রশ্ন উঠছে। তবে, এত কিছুর পরও হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক রয়েছে বলেই জানিয়েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা।
প্রসঙ্গত, আরজি করে চিকিৎসক পড়ুয়ার ধর্ষণ ও খুনের পর থেকেই রাজ্যজুড়ে গণ-আন্দোলন শুরু হয়েছে। চিকিৎসকদের সুরক্ষা প্রদান এবং চিকিৎসা পরিষেবা দুর্নীতিমুক্ত করতে সরব হয়েছেন সর্বস্তরের মানুষ। সেই আবহে জলপাইগুড়ির এই ঘটনা রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলির বেহাল নিরাপত্তাব্যবস্থাই আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল বলে মনে করছে চিকিৎসক মহল।