জাল পাসপোর্ট, জাল আধার কার্ড, জাল প্যান কার্ড তৈরির চক্রের হদিশ তো আগেই পাওয়া গিয়েছিল এ রাজ্যে, এবার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের মাথাব্যথা বাড়াল জাল ডোমিসাইল সার্টিফিকেট (বাসস্থান বা বসবাসের প্রামাণ্য নথি) এবং জাল কাস্ট সার্টিফিকেট তৈরির এক চক্র! যে চক্রের সাহায্য়ে ভুয়ো শংসাপত্র আদায় করে আধাসেনার চাকরি জুটিয়ে নিচ্ছেন ভিনরাজ্যের চাকরিপ্রার্থীরা। অথচ, সেই চাকরি তাঁরা করছেন পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা হিসাবে!
যদিও এ রাজ্যে এই ধরনের ঘটনাও নতুন কিছু নয় (এর আগে উত্তরবঙ্গে এমন ঘটনা সামনে এসেছে), তবুও সূত্রের দাবি - সম্প্রতি উত্তর ২৪ পরগায় এমন একটি চক্রের হদিশ পাওয়া গিয়েছে, যারা জাল ডোমিসাইল সার্টিফিকেট এবং জাল কাস্ট সার্টিফিকেট তৈরি করে এবং তা ক্লায়েন্টের হাতে পৌঁছে দিয়ে কোটি কোটি টাকা রোজগার করেছে।
গত ৩১ জানুয়ারি (২০২৫) এই চক্রের পান্ডাকে গ্রেফতার করেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা বা সিবিআই। ধৃতের নাম মহেশকুমার চৌধুরী। যিনি নিজেও আদতে একজন সেনা জওয়ান। এবং তিনি উত্তর ২৪ পরগনার কাঁকিনাড়ার ইঞ্জিনিয়ার স্টোর্স ডিপো-এ কর্মরত ছিলেন।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বেশ কিছু আসল ঠিকানা এবং বেশ কিছু ভুয়ো ঠিকানা ব্যবহার করে জাল ডোমিসাইল সার্টিফিকেট এবং জাল কাস্ট সার্টিফিকেট তৈরি করা হয়েছে। এমন এক-একটি আসল অথবা ভুয়ো ঠিকানা ব্যবহার করে কমপক্ষে চার থেকে পাঁচজনের নামে জাল সার্টিফিকেট তৈরি করা হয়েছে।
তথ্য বলছে, আধাসেনার চাকরি জোগাড় করতে যাঁরা এইসব ভুয়ো বা জাল শংসাপত্র ব্যবহার করেছেন, তাঁরা অধিকাংশই উত্তরপ্রদেশ কিংবা বিহারের বাসিন্দা। এখনও পর্যন্ত সিবিআই অন্তত ২৫ জন এমন ব্যক্তির খোঁজ পেয়েছে, যাঁরা এই জাল শংসাপত্র ব্যবহার করে আধাসামরিকবাহিনীতে নিযুক্ত হয়েছেন। সংশ্লিষ্ট চক্রের মাধ্যমেই এই অসাধু চাকরিপ্রাপকদের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে।
এই গোটা ঘটনার জেরে এখনও পর্যন্ত সিবিআই তদন্তের মুখে পড়ে সাত থেকে আটজনকে চাকরি হারাতে হয়েছে। তবে, বিএসএফ, এসএসবি-র মতো বাহিনীগুলিতে অন্তত ১০০ জন এমন রয়েছেন, যাঁরা এই জাল ডোমিসাইল সার্টিফিকেট এবং জাল কাস্ট সার্টিফিকেট ব্যবহার করেছেন।
সূত্রের দাবি, এর বদলে এই চাকরি প্রাপকদের কাছ থেকে এখনও পর্যন্ত অন্তত ৭ কোটি টাকা আদায় করেছে ধৃত মহেশ ও তাঁর জালিয়াত চক্রের সদস্যরা। সেই টাকা কখনও সরাসরি, আবার কখনও দালালদের মাধ্যমে মহেশ বা তাঁর কোনও আত্মীয়ের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত এমন অন্তত তিনটি ব্যাঙ্ক অ্য়াকাউন্টের সন্ধান পেয়েছেন সিবিআই আধিকারিকরা।
সেইসঙ্গে, গোয়েন্দারা মহেশের দু'টি মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করেছেন। সেগুলি থেকে মুছে ফেলা বহু তথ্য পুনরুদ্ধার করতে ফোন দু'টিকে সেন্ট্রাল ফরেন্সিক ল্যাবে পাঠাবে সিবিআই। এই গোটা ঘটনায় প্রশাসনের কেউ জড়িত রয়েছেন কিনা, তাও খতিয়ে দেখছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা।