বাসন্তীর নেবুখালি গাজি পাড়ায় নাবালকের দেহ উদ্ধারে এক নাবালক-সহ ২ জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। ধৃত ব্যক্তি মৃতের মেসোমশাই। গত ৩ মে সাবির হোসেন মোল্লা নামে নয় বছরের নাবালকের হাত, পা বাঁধা ও গলায় ফাঁস লাগানো মৃতদেহ উদ্ধার হয়। পুলিশের দাবি, মেসোমশাইয়ের সঙ্গে সৎ দিদির ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা জেনে ফেলায় খুন করা হয়েছে তাঁকে।
২ মে ভোটগণনার দিন থেকে নিখোঁজ ছিল সাবির। এলাকায় তাকে না পেয়ে বাসন্তী থানায় অভিযোগ দায়ের করেন পরিবারের সদস্যরা। এর পরই বাড়ির পাশে একটি পরিত্যক্ত ঘর থেকে হাত পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার হয় সাবিরের দেহ। গলায় ছিল ফাঁস। সারা শরীরে সূচ ফোটানোর চিহ্ন দেখে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান ছিল নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে সাবিরকে। এর পরই অপরাধীদের ধরতে ও খুনের কারণ জানতে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। তদন্তে নেমে এক সপ্তাহের মধ্যেই রহস্য উন্মোচন করেন বাসন্তী থানার আইসি মহম্মদ আব্দুর রব খান-সহ তদন্তকারী পুলিশ অফিসাররা।
ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ সাবিরের কয়েকজন সঙ্গীকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। পাশাপাশি মৃতের বাবা সিরাজুল মোল্লা সহ স্থানীয় বেশ কয়েকজন প্রতিবেশীকেও জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন তদন্তকারীরা। পুলিশ জানতে পারে, নিহতের সৎ দিদির সাথে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল তার মেসো রফিকুল ইসলামের। দু’জনের মধ্যে নিয়মিত মেলামেশা চলত। তাঁদের ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখে ফেলেছিল সাবির। এরই মধ্যে দিদি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে লোক জানাজানি হয়। ঘটনায় রফিকুলের নাম উঠে আসে। কিন্তু রফিকুল সম্পর্কের কথা অস্বীকার করে। এ নিয়ে গ্রাম্য সালিশি সভা বসে। সেই সভায় রফিকুলের বিরুদ্ধে বয়ান দেয় সাবির। এরপরই গ্রামের মুরুব্বিদের চাপে নিজের অন্যায় স্বীকার করে অভিযুক্ত। সালিশি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সাবিরের দিদিকে বিয়ে করতে বাধ্য হয় রফিকুল। সেই থেকেই সাবিরের উপর যত রাগ গিয়ে পড়ে অভিযুক্তের।
ঘটনার পর কয়েকদিন কাটতে না কাটতেই সাবিরকে খুনের পরিকল্পনা করে রফিকুল। এ কাজে তাকে সাহায্য করতে গ্রামের আরেক বছর পনেরোর নাবালককে সঙ্গী করে সে। এরপর ২ মে রাতে গ্রামের একটি বাঁশ বাগানে ডেকে নিয়ে গিয়ে সাবিরকে খুন করে অভিযুক্ত রফিকুল ও তার নাবালক সহযোগী। খুনের পর ওই রাতেই দেহ পরিত্যক্ত ঘরে ফেলে দিয়ে যায় তারা।
ঘটনার পর থেকেই পলাতক ছিল রফিকুল। তাতেই পুলিশের প্রাথমিক সন্দেহ হয়েছিল। বাসন্তী থানার পুলিশ গ্রেফতার করে অভিযুক্তকে। পুলিশি জেরায় নিজের দোষ স্বীকার করেছে। ঘটনার সাথে জড়িত নাবালককেও আইন মেনে গ্রেফতার করে পুলিশ। অন্যদিকে অভিযুক্তকে আদালতে তোলা হলে বিচারক পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। অভিযুক্তকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে এ বিষয়ে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইছে পুলিশ। এই ঘটনার সাথে আরও কেউ জড়িত আছে কিনা সে বিষয়ে ও তদন্ত চলছে। নিহতের পরিবার অভিযুক্তের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছে।