বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ছাত্রী অনামিকা সিংয়ের মৃত্যুর ঘটনায় ভুয়ো ক্রিপ্টোকারেন্সি চক্রের যোগ পেল পুলিশ। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, ক্রিপ্টোকারেন্সি চক্রের ফাঁদে পড়ে কয়েক লক্ষ টাকা দেনা হয়েছিল ছাত্রীর। তা মেটাতে না পেরেই মানসিক চাপে শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন ছাত্রী। সেই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
আরও পড়ুন: বিশ্বভারতীর হস্টেলে ভিন রাজ্যের ছাত্রীর রহস্যমৃত্যু, কারণ জানতে তদন্তে পুলিশ
জানা গিয়েছে, অনামিকা সিং ক্রিপ্টোকারেন্সিতে ২ লক্ষ ২৬ হাজার টাকা লগ্নি করেছিলেন। প্রথমের দিকে ২ বার লভ্যাংশ পেয়েছিলেন। কিন্তু, পরবর্তী সময়ে আর কোনওভাবেই তিনি টাকা পাননি। এদিকে, বিনিয়োগের জন্য দফায় দফায় পরিবার এবং বন্ধুবান্ধব ও অন্যান্যদের কাছ থেকে কয়েক লক্ষ টাকা ধার নিয়েছিলেন অনামিকা। কিন্তু, প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়েছেন বুঝতে পেরে তিনি ধার নেওয়া টাকা ফেরানো নিয়ে মানসিক চাপের মধ্যে ছিলেন।
এ বিষয়ে বীরভূম জেলার পুলিশ সুপার রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায় জানান, ছাত্রী যখন বিনিয়োগ করা টাকা ফেরত পাচ্ছিলেন না তখন কীভাবে ধার নেওয়া টাকা মেটাবেন তাই নিয়ে চাপের মধ্যে ছিলেন। সেই কারণে তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথমে টেলিগ্রাম অ্যাপের মাধ্যমে একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি বিনিয়োগ গ্রুপে যুক্ত হন অনামিকা। তারপরে সেখানে বেশ কয়েক দফায় টাকা বিনিয়োগ করেন। পরে প্রতারণা চক্র তাঁকে আরও বেশি পরিমাণে টাকা বিনিয়োগের জন্য চাপ দেয়। তখন তিনি ৯০ হাজার টাকা জোগাড় করে লগ্নি করেন। এখানেই না থেমে তাঁর ওপর বারবার লগ্নির জন্য চাপ বাড়তে থাকে প্রতারকরা। তবে সেই কথা তিনি পুলিশ বা অন্য কাউকে জানাননি। শুধু তাই নয়, চড়া সুদে টাকা নিয়েও তিনি নিয়োগ করেছিলেন। ইতিমধ্যে, এই চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ কলকাতা থেকে ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে। আরও কারা এই চক্রের সঙ্গে জড়িত তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।
প্রসঙ্গত, এই ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ অনামিকার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট উদ্ধার করে। তাতে এক ব্যক্তি অনামিকাকে হুমকি দিচ্ছিলেন বলে জানা যায়। এখন তার কাছ থেকে অনামিকা টাকা ঋণ করেছিলেন কি না তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।
তদন্তকারীরা জানতে পারেন, অনামিকা সিং তাঁর বোনের দুর্ঘটনার কথা জানিয়ে সহপাঠী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের কাছ থেকে টাকা সাহায্য চেয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন তাঁর বোনের দুর্ঘটনার জন্য টাকা ৫ লক্ষ টাকা প্রয়োজন। কিন্তু, তাঁর বোনের আদৌও কোনও দুর্ঘটনা হয়নি। পুলিশ জানতে পারে, যে ৫ লক্ষ টাকার কথা বলা হয়েছিল হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটে। সেই টাকা জোগাড় করে ফেলেছিলেন অনামিকা। তবে তাঁর অ্যাকাউন্টে টাকা ছিল না। টাকা পাঠানো হয়েছিল অন্য দুটি অ্যাকাউন্টে। জানা গিয়েছে, প্রথমে ৪ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা জমা করেন অনামিকা। পরে বাকি পরে ৭০ হাজার টাকা তিনি জোগাড়ও করে ফেলেন।
সহপাঠীদের বক্তব্য, বিশ্বভারতীর শিল্প সদনের হস্টেলে আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়েন অনামিকা। তিনি জানান, যে বিষ খেয়েছেন। তখন তড়িঘড়ি তাঁকে বিশ্বভারতীর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে বোলপুরের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকরা সেখানে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।