ভিন রাজ্যে আলু রফতানি পুরোপুরি বন্ধ করেছে রাজ্য সরকার। বাংলার মানুষকে সস্তা দরে আলু খাওয়াতে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেখানে বাড়তি মুনাফার লোভে ভিন রাজ্যে আলু সরবরাহ করতে চায় ব্যবসায়ীরা। এই আবহে রবিবার দিন সকাল থেকেই শুরু হয়েছে আলুবোঝাই লরি আটকানো। ঝাড়খণ্ড–বাংলা সীমানা থেকে শুরু করে আসানসোলের কুলটিতে এবং রূপনারায়নপুর, রুনাকুড়াঘাটের সীমানা চেকপোস্টে আলুবোঝাই লরি আটকাচ্ছে পুলিশ। আর তা পশ্চিমবঙ্গে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। গতকাল রাতে ডুবুরডিহি চেকপোস্টে দুটি আলুর গাড়ি ফিরিয়ে দিয়েছে পুলিশ। রবিবার সকাল থেকে দেখা গেল রীতিমতো ক্যাম্প করে আলুবোঝাই লরি আটকে ফেরাচ্ছে পুলিশ।
এদিকে রাজ্যের আলু সমস্যা কিছুতেই মিটছে না। প্রত্যেক বাজারে গিয়ে টাস্ক ফোর্স হানা দিলেও আলুর দাম কমছে না। ৩৫ টাকা কেজি দরে জ্যোতি আলু কিনতে হচ্ছে। তাতে নাভিশ্বাস উঠছে মধ্যবিত্তের। হিমঘরগুলিতে আলু মজুত রাখার সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের দাবি, রাজ্য সরকার যদি আলু রফতানি করতে না দেয় তাহলে আলু কিনে নিক। কিন্তু সেই দাবিতে সাড়া দেয়নি রাজ্য সরকার। তাই প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি এবং হিমঘর মালিক সংগঠন যৌথভাবে রাত পোহালেই সোমবার থেকে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে। আর আগামী মঙ্গলবার থেকে সারা বাংলায় আলু সরবরাহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি ও রাজ্য হিমঘর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন।
আরও পড়ুন: সংসদের আসন বন্টন নিয়ে ক্ষোভ চরমে, কড়া চিঠি সুদীপের, তৃণমূলকে বৈঠকে ডাকল কংগ্রেস
অন্যদিকে এই আলু দাম যখন রাজ্য সরকার কমিয়ে নাগরিকদের কাছে সস্তায় পৌঁছে দিতে চাইছে তখন সরবরাহ বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়ে আলুর দাম বাজারে বাড়িয়ে দিতে চাইছেন ব্যবসায়ীরা। কৃত্রিম অভাব তৈরি করে আলুর দাম নতুন করে বাড়িয়ে দিতে চাইছেন তাঁরা বলে অভিযোগ। সেক্ষেত্রে আলুর ‘দোষ’ কার? দাম বাড়ানোর নেপথ্যে দোষ কার? উঠছে প্রশ্ন। গত বৃহস্পতিবার এবং শনিবার তারকেশ্বরের আলু ব্যবসায়ী সমিতি ভবনে দু’দফায় বৈঠক করে রাজ্য প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি এবং রাজ্য হিমঘর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। ওই বৈঠক শেষে আগামী মঙ্গলবার থেকে হিমঘর থেকে আলু সরবরাহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া হিমঘরে আলু মজুত রাখার সময়সীমা ৩০ নভেম্বর থেকে বাড়িয়ে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত করেছে রাজ্য সরকার। সেক্ষেত্রে আলু ব্যবসায়ীদের সুবিধা হয়েছে। তারপরও এই সরবরাহ বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়ে কার্যত রাজ্য সরকারকেই চাপে ফেলতে চাইছেন আলু ব্যবসায়ীরা। গত ২৩ নভেম্বর কলকাতার বাজারে আলুর দামে রাশ টানতে হুগলির আলু ব্যবসায়ীদের নিয়ে হরিপালে বৈঠক করেন কৃষি বিপণন মন্ত্রী বেচারাম মান্না। তাতে ঠিক হয়, ২৬ টাকা কেজি দরে হিমঘর থেকে আলু বিক্রি করবেন ব্যবসায়ীরা। তারপরও খুচরো বাজারে আলু অগ্নিমূল্য। সেক্ষেত্রে আলুর ‘দোষ’ কার? প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।