বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের মধ্যে বীরভূমের দেউচা - পাঁচামি কয়লাখনিতে খননকাজ শুরু করে শিল্পপতিদের বার্তা দিতে চেয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু ব্যুমেরাং হল তাঁর সেই উদ্যোগ। মুখ্যমন্ত্রীর দেখানো পথেই ক্ষতিপূরণ ও চাকরির দাবিতে দিনের পর রাতেও সেখানে বিক্ষোভ দেখালেন স্থানীয় বাসিন্দারা। যদিও ব্যাপক পুলিশি পাহারার ব্যবস্থা করে কার্যত জোর করে খনিমুখ থেকে পাথর সরানোর প্রক্রিয়া শুরু করে জেলা প্রশাসন। যার জেরে ক্ষোভে ফুঁসছেন স্থানীয় মূলবাসী মানুষরা।
বৃহস্পতিবার রাতে এক্সাভেটর যন্ত্র দিয়ে দেউচা পাঁচামিতে পাথর তোলা কাজ শুরু হয়। তখন সেখানে হাজির ছিলেন জেলাশাসক বিধান রায় ও জেলা পুলিশ সুপার আমনদীপ। খনন কাজ শুরু হতেই এলাকার মানুষজন লাঠি হাতে উপস্থিত হয় সেখানে শুরু হয় তুমুল বিক্ষোভ। এমনকী খননকার্য বন্ধ রাখার চেষ্টাও করেন তাঁরা।
বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন থেকে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা মতো বৃহস্পতিবার দেউচা-পাচামিতে খনন কাজ শুরু করতে গিয়ে সকাল থেকেই বিক্ষোভের মুখে প্রশাসনিক আধিকারিকেরা। মথুরাপাহাড়ি ও দেওয়ানগঞ্জ এলাকায় কয়লা উত্তোলনের আগে ব্যাসল্ট শিলা খনন কাজ শুরু করার প্রস্তুতি চলছিল। সে জন্য বীরভূম জেলা শাসক বিধান রায়ের নেতৃত্বে প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিরা সেখানে পৌঁছন৷ আর তাঁদের দেখেই চাকরির দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন স্থানীয়রা মূলবাসী মানুষরা। তাঁদের দাবি আগে কর্মসংস্থান সুনিশ্চিত করতে হবে, তারপর শুরু হবে কয়লা খনির কাজ৷
বুধবার বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘বাংলার শিল্প উন্নয়নের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা নেবে দেউচা-পাচামি কোল ব্লক৷ এখানে বিপুল পরিমাণ কয়লা ও ব্যাসল্ট শিলা আছে৷ বৃহস্পতিবার থেকেই খনন কাজ শুরু হবে।’
মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরেই সিউড়ি বৈঠক করেন বীরভূম জেলা শাসক বিধান রায়, রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলাম, বীরভূম জেলা পুলিশ সুপার আমনদীপ সিং-সহ প্রশাসনিক আধিকারিকেরা। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কয়লা খনির জন্য খনন কাজ শুরু করার চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়া হয়৷ কয়লা উত্তোলনের আগে ব্যাসল্ট শিলা খননের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। সেই মতো মথুরাপাহাড়ি ও দেওয়ানগঞ্জ এলাকায় বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল৷ ইতিমধ্যেই এই প্রকল্পের জন্য ৩৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু, এখন এলাকায় জেলা শাসক সহ প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিরা পৌঁছাতেই শুরু হয় বিক্ষোভ। প্রশাসনিক কর্তাদের বাধা দেয় বিক্ষোভকারীরা৷ আটকে রাখা হয় খননের জন্য আনা এক্সাভেটর। বিক্ষোভকারীদের স্পষ্ট দাবি, আগে জমিদারাদের প্রাপ্য চাকরি বুঝিয়ে দিতে হবে তারপর কয়লা খনির কাজ শুরু হবে৷
প্রসঙ্গত, দেউচা-পাচামিতে কয়লা খনি হলে কমপক্ষে ২১ হাজার মানুষের বসতি অন্যত্র সরাতে হবে৷ ধ্বংস হবে বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল, জলাভূমি, চারণভূমি। তাই প্রথম থেকে খনির বিরুদ্ধে ছিল জনজাতি সম্প্রদায়ের একটা বড় অংশ৷ আরেকটি অংশ জমি দিতে ইচ্ছুক হলেও তাদের দাবি ছিল মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা মতো আর্থিক প্যাকেজ ও চাকরি চাই৷ কিন্তু, এই এলাকায় বহু জমিদাতা চাকরি পাননি, এই অভিযোগ দীর্ঘদিনের৷ এই অভিযোগে তারা জেলা শাসকের কাছে আগেও একাধিকবার ডেপুটেশন দিয়েছিল৷