বিশ্বভারতীতে এসে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে শ্রদ্ধা জানাতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান বলে মনে করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। রবিবার বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে শ্রদ্ধা জানিয়ে উপাসনা গৃহ ঘুরে দেখেন তিনি। সেখান থেকে যান উত্তরায়নে। সঙ্গীত ভবনে রবীন্দ্রসঙ্গীতের মাধ্যমে বরণ করা হয় তাঁকে। এর পরই তিনি যান শান্তিনিকেতনের বাংলাদেশ ভবনে।
বাংলাদেশ ভবন থেকে বেরিয়ে এদিন সংবাদমাধ্যমকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, ‘এই দিন আমার কাছে অনেক সৌভাগ্যের। আজ আমি বিশ্বভারতীতে এসে এমন এক মহামানবকে শ্রদ্ধা জানাতে পেরেছি যিনি সারা পৃথিবীতে ভারতীয় জ্ঞান, দর্শন, কলা, সাহিত্যর পরিসর আরও মজবুত করেছেন।’ অমিত শাহের মতে, ‘স্বাধীনতার প্রাক্কালে রাষ্ট্রবাদের দুই ধারা মহাত্মা গান্ধী ও নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু— দু’জনেরই অনুপ্রেরণা ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বভারতী ও শান্তিনিকেতনের মাধ্যমে সারা পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে ভারতীয় ভাষা, সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন।’
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল–প্রাপ্তি নিয়ে বলতে গিয়ে অমিত শাহ বলেন, ‘আমি এটা মন থেকে মানি, নোবেল পুরস্কার গুরুদেবের লেখা কবিতাকে স্বীকৃতি দেয়নি, বরং গুরুদেবকে সম্মানিত করে নোবেল সংস্থা নিজেকে স্বীকৃতি দিয়েছে।’ অমিত শাহের কথায়, ‘গুরুদেব বলতেন, সংকীর্ণতার সমস্ত শিকল ভেঙে ফেলাই শিক্ষার উদ্দেশ্য। বিশ্বভারতীয় ১০০ বছর উপলক্ষে সেই বার্তাই আরও মজবুতভাবে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে। আমরা সবাই চাই, গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আদর্শ মেনে ভারতের দর্শন, জ্ঞান, সাহিত্য, কলা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি পাক।’
অমিত শাহ এদিন আরও বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এমন একমাত্র ব্যক্তি যাঁর দুটি লেখা গান দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীত। শান্তিনিকেতনে যেখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মহাত্ম গান্ধীরা থাকতেন সেখানে আজ কিছুটা সময় কাটিয়েছি। এই মহামানবদের শ্রদ্ধা জানানোর যে সুযোগ আমি পেয়েছি তাতে আমি নিজেকে অনেক ভাগ্যবান বলে মনে করি।’ যদিও এদিনই সাংবাদিক বৈঠকে বিজেপি–র বিরুদ্ধে তৃণমূল নেতা তথা পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় অভিযোগ করে বলেছেন, ‘রবীন্দ্রনাথকে অপমান করেছে বিজেপি। মনীষীদের ছোট করা হচ্ছে। বাইরের লোক এসে এভাবে অপমান করবে এটা মেনে নেওয়া যায় না।’
উল্লেখ্য, শনিবারই বোলপুরে ছড়িয়ে পড়া একটি পোস্টার ঘিরে চরমে ওঠে বিতর্ক। তাতে দেখা যাচ্ছে, অমিত শাহের ছবির নীচে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবি, আর তার নীচে বিজেপি নেতা অনুপম হাজরার ছবি। কেন ব্যানারে অমিত শাহর নীচে রবীন্দ্রনাথের স্থান? এই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ক্ষুব্ধ রবীন্দ্রপ্রেমীরা ও রাজ্যের শাসকদল। এর প্রতিবাদে রবিবার শান্তিনিকেতন–সহ সারা রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদ কর্মসূচির ঘোষণা করেছে তৃণমূল।