নদিয়ার কল্যাণীতে বেআইনি বাজি কারখানার প্রাণঘাতী বিস্ফোরণে পাঁচ মহিলা শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যুর পর থেকেই পুরোদস্তুর 'অ্যাকশন মোড অন' করে দিয়েছে রানাঘাট জেলা পুলিশ। এলাকায় বেআইনি বাজি কারখানার হদিশ পেতে লাগাতার চলছে তল্লাশি, অভিযান ও ধরপাকড়। যার সুফলও মিলছে হাতেনাতে।
শুক্রবার রাতে মোট তিনটি এলাকায় অভিযান চালায় রানাঘাট জেলা পুলিশ। এই এলাকাগুলি হল - কল্যাণীর রথতলা, চাকদার চন্দুরিয়া এবং গাংনাপুর থানা এলাকার বিবেকানন্দ পল্লি। তিনটি জায়গাতেই অবৈধ বাজি কারখানা চালানোর অথবা বাজি মজুত রাখার খবর ছিল পুলিশের কাছে। সেই মতোই অভিযান চালানো হয়। তিনটি জায়গা থেকেই যথেষ্ট পরিমাণে মজুত বাজি উদ্ধার করা হয়। এবং গ্রেফতার করা হয় মোট তিনজনকে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতদের মধ্যে রয়েছেন - কল্যাণীর রথতলার বাসিন্দা বছর বিয়াল্লিশের উত্তম দাস। তাঁর কাছ থেকে প্রায় ৪০ কেজি আতশবাজি বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ।
এছাড়াও, চাকদার চান্দুরিয়ার বাসিন্দা অভিজিৎ হালদারকেও বেআইনিভাবে বাজির কারবার চালানোর অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। তাঁর কাছ থেকেও প্রায় ১০ কেজি আতশবাজি বাজেয়াপ্ত করা হয়।
এর পাশাপাশি, গাংনাপুর থানার অন্তর্গত বিবেকানন্দ পল্লির এক ব্যক্তিকেও একই কারণে গ্রেফতার করা হয় এবং তাঁর হেফাজত থেকে প্রায় ৪ কেজি মজুত করে রাখা বাজি উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, রানাঘাট পুলিশ জেলার সুপার কুমার সানি রাজ এলাকায় আতশবাজির বেআইনি কারবার রুখতে বিশেষভাবে তৎপর হয়ে উঠেছেন। তাঁর নির্দেশে লাগাতার পুলিশের অভিযান চলছে। পুলিশ সুপারের নির্দেশ পাওয়ার পর স্থানীয় থানাগুলিও তাদের তৎপরতা বাড়িয়েছে এবং কে বা কারা কোথায় বেআইনি বাজির ব্যবসা ফেঁদে বসেছেন, তার খবর নেওয়া হচ্ছে। নির্ভরযোগ্য খবর হাতে এলেই চলছে অভিযান।
শুক্রবার রাতে তিনটি পৃথক জায়গায় অভিযান চালিয়ে যে তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর পদক্ষেপ করা হবে বলে দাবি পুলিশ সূত্রের। শনিবারই ধৃতদের আদালতে পেশ করার কথা। তিনজনকেই নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করতে চায় পুলিশ।
সম্প্রতি নদীয়ার কল্যাণীর রথতলা এলাকাতেই একটি বেআইনি বাজি কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। যার জেরে ঘটনাস্থলেই চার মহিলা শ্রমিককে প্রাণ হারাতে হয়। পরে গুরুতর জখম আরও এক মহিলা শ্রমিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। সেই ঘটনার তদন্ত এখনও চলছে।
অন্যদিকে, গোটা ঘটনায় কড়া অবস্থান নিয়েছে নবান্ন। জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের কাছে নবান্নের পক্ষ থেকে রিপোর্ট তলব করা হয়েছে। যদিও স্থানীয় সূত্রের দাবি, এই এলাকায় এমন কারখানা নাকি অনেক রয়েছে। কখনও কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে কিছুদিন তা নিয়ে হইচই হয়। তারপর আবার রমরমিয়ে চলতে থাকে বাজির কারবার। আপাতত পুলিশ সেই কারবার রুখতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে।