একটা সময় ছিল যখন পাড়ায় পাড়ায় ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা রথ নিয়ে বেড়ত। কিন্তু এখন সেই ছবি দেখাই যায় না। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে আর সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশি অভ্যস্ত নতুন প্রজন্ম। এই রকম প্রেক্ষাপটেও বাড়িতেই রথ তৈরি করার ভাবনা মাথায় এসেছে প্রলয়ের। আর যেমন ভাবনা তেমন কাজ। কিন্তু সেই রথ তৈরি করবেন কে? এগিয়ে এলেন পাড়ারই বাসিন্দা দিস্তার আলি। তাঁর হাতের কেরামতিতেই গড়ে উঠছে প্রায় ১০ ফুট উচ্চতার রথ।
প্রলয়ের বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার বিশরপাড়ায় মুজাফফর আহমেদ সরণীর নজরুল লেনে। প্রলয়ের এলাকার বিশ্বাস বাড়ির ছেলে। প্রতি বছর এই বিশ্বাস বাড়িতে জন্মাষ্টমী উৎসব ধুমধাম করে পালিত হয়। এই জন্মাষ্টমী করার পিছনেও প্রলয়ের ভূমিকা ছিল। পরের বছর যেহেতু মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসবে সে। যেহেতু জন্মাষ্টমী উৎসব ১৯ আগস্ট, সেই সময় স্বভাবতই পড়াশোনার চাপ আরও বেড়ে যাবে, তাই জন্মষ্টমী ছোট করে পালন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই সময়ই প্রলয় ঠিক করে এবারে সে রথযাত্রা করবে। আর রথ তৈরি হবে বাড়িতেই। বাড়ির লোকেরাও তাঁর কথায় রাজি হয়ে যায়। রথ তৈরির কাজ শুরু হয়ে যায়। প্রথমদিকে প্রলয় ও তাঁর বন্ধু রাজেশ সেন রথ তৈরির কাজ শুরু করলেও পরে এগিয়ে আসেন পাড়ারই ছেলে দিস্তার আলি। সেগুন কাঠ, প্লাইবোর্ড ব্যবহার করে তৈরি করা হচ্ছে এই রথ। তিন তলার এই রথে মাঝের জায়গায় অধিষ্ঠান করবেন জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা। সেইসঙ্গে থাকবেন গোপাল। রথের চাকা তৈরি করা হয়েছে ফাইবার দিয়ে।
প্রলয়দের বাড়িতে গোপাল অনেকদিন ধরেই রয়েছে। কিন্তু জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা ছিল না। তাই পরিবারের লোকেরা চিন্তায় পড়ে যান, তাহলে কী হবে। কাকতালীয়ভাবে সেই ব্যবস্থাও হয়ে যায় প্রলয়ের উদ্যোগেই। প্রলয়ের বন্ধু রাজেশের মাধ্যমে পুরী থেকে কিছুদিন আগেই পৌঁছেছে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা। এই তিনটিই আম কাঠের তৈরি। এই জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাই অধিষ্ঠান করবেন রথে। আগামী ১ জুলাই রথযাত্রার দিন সন্ধ্যায় এই বিশ্বাস বাড়ি থেকেই রথ এলাকায় প্রায় তিন কিলোমিটার পথ ঘুরে পৌঁছোবে বিশ্বাসদেরই আরেকটি বাড়িতে। এই রথ যাত্রার সময়ে কীর্তনের দলও সঙ্গে থাকবে। সেই সঙ্গে বিশ্বাসদের বাড়ির কাছেই বসছে চপ, পাঁপড় ভাজার স্টল। রথের দিন খিচুড়ি ভোগ বিতরণ করা হবে এলাকার বাসিন্দাদের। রথ যখন যাত্রা করবে তখন লুচি, সুজিও দেওয়া হবে ভক্তদের।
তবে যার কারিগরি বিদ্যায় এই রথ তৈরি হচ্ছে, সেই দিস্তার আলি জানান, ‘এই কর্মযজ্ঞে সামিল হতে পেরে খুব ভালো লাগছে। প্রলয়রা দেখলাম, রথ বানাচ্ছিল। আমিও এগিয়ে এলাম। যদি ওদের একটু সাহায্য করতে পারি। এই সব কাজ করতে ভালোই লাগে।’ দিস্তার এগিয়ে আসায় খুশি প্রলয়ও। তাঁর মতে, ‘আমরা যখন রাধাকৃষ্ণের মূর্তি কিনি বা যেকোনও মূর্তি কিনি, তখন দেখি না সেটি কে তৈরি করছে।’ প্রলয়ের এই উদ্যোগে খুশি বাড়ির গৃহকত্রী শ্যামলী বিশ্বাসও। তিনি জানান, ‘ছোটবেলা থেকেই আমার নাতির ঠাকুর দেবতার প্রতি খুব ভক্তি। ওর জন্যই তো বাড়িতে গোপাল নিয়ে আসা। গোপালের পুজো করা। এবার রথ যাত্রা হচ্ছে। খুব ভালো লাগছে।’